চট্টগ্রামে পার্কে ঘুরতে গিয়ে আনসার সদস্যদের হাতে শাররীকভাবে লাঞ্চিত হয়েছেন দুই ওসি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন ও বান্দরবান সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম লাঞ্চিত হয়েছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ দুই আনসার সদস্য সোহেল রানা ও মোহাম্মদ মুহিন আহমেদকে আটক করে থানায় নিলেও পরে আনসার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমঝোতার ভিক্তিতে দায়ী আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে তাদের ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। পরে ৩ আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
জানা গেছে, নগরীর ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে বেড়াতে গিয়ে আনসার সদস্যদের হাতে লাঞ্ছিত চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিনকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ওই ঘটনার জেরে আনসার ব্যাটালিয়নের তিন সদস্যকে ক্লোজড করা হয়।
রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী বলেন, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গণমাধ্যমকে বলা যাবে না।
পুলিশ এবং আনসার ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি নাজিম উদ্দিন ও বান্দরবান সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম সপরিবারে ফয়’স অ্যামিউজমেন্ট পার্কে বেড়াতে যায়।তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি ফয়’স লেকের আনসার ব্যাটালিয়ন রেঞ্জ অফিসের প্রধান ফটক অতিক্রম করার পর থামে। এ সময় গাড়ি পার্কিং করাকে কেন্দ্র করে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যদের সঙ্গে ওসি নাজিম উদ্দিনের তর্ক হয়। তর্কের একপর্যায়ে আনসার সদস্য সোহেল রানা ও মোহাম্মদ মুহিন আহমেদসহ কয়েকজন মিলে পুলিশ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিনকে ব্যাটালিয়নের গেটের ভেতরে নিয়ে মারধর করেন। তিনি নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দেয়ার পরও তাকে মারধর করে আটকে রাখে আনসার সদস্যরা।
পরে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন আকবর শাহ থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ টিম।
পুলিশ দল ওসি নাজিমকে উদ্ধার করে আনসার সদস্য সোহেল ও মুহিনকে থানায় নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর রাতেই আকবর শাহ থানায় পৌঁছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) জসিম উদ্দিন ও রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশের সুপার প্রকৌশলী হাসান চৌধুরী এবং ৩১ আনসার ব্যাটালিয়ন ফয়’স লেকের পরিচালক নাজমুল হক নুরনবী।
সেখানে উভয় বিভাগের মধ্যে বৈঠকে শেষে দায়ী আনসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির আশ্বাস দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়া হয়। এবং কোন ধরণের মামলা না করে সাধারণ ডায়রি রুজু করা হয়। (সাধারণ ডায়েরি (১৫০৫, তারিখ : ২৭.১২.২০২২)
জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’জন আনসার সদস্যকে থানায় আনা হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তাদের আনসার বাহিনীর পরিচালকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় কেউ অভিযোগ দাখিল করেননি। ফলে মামলা রুজু হয়নি।’
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বাবার লাশ দাফনে বাঁধা সন্তানদের!
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আলোচনার পর এটি মীমাংসা করা হয়েছে। আনসার বাহিনী এরই মধ্যে জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে পুলিশকে অবহিত করেছে।’
ফয়’স লেকের ৩১ আনসার ব্যাটালিয়ন পরিচালক নাজমুল হক নূরনবী জানান, অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত তিন সদস্যকে সাময়িক ক্লোজড করা হয়েছে। ক্লোজড হওয়া আনসার সদস্যরা হলেন—সোহেল রানা, মুহিন আহম্মেদ ও সাইদুল রহমান।
এদিকে রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত ঘটনায় লাঞ্চিত চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি নাজিম উদ্দিনকে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার করে (ক্লাজ) পুলিশ লাইনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি অসুস্থ। তাই বেশি কথা বলতে পারছি না। এ ঘটনার বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী বলেন, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গণমাধ্যমকে বলা যাবে না।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, গ্রেপ্তার ২৩