সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে যদি উচ্চাভিলাষী সংস্কার ও একটি সফল জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে চায় তাহলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও সতর্ক, উদ্যমী ও সংবেদনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজনীয়।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: করণীয় কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বে অব বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ও কসমস ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কসমস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশন ও বে অব বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। সমাপনী বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনের ইমেরিটাস উপদেষ্টা ও বে অব বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত (অব.) তারিক আহমদ করিম।
সরকারের উদ্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপনি যদি ভবিষ্যতে সত্যিকার অর্থে উচ্চাভিলাষী সংস্কার এবং শেষ পর্যন্ত একটি চমৎকার জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে চান, তাহলে দেশের জনগণের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি আরও সংবেদনশীলতা ও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বিদেশি মিত্র, বিনিয়োগকারী, উন্নয়ন সহযোগী ও বাজার নিয়ন্ত্রকদের উৎসাহ প্রকাশ পেলেও উদ্বেগ এখনও রয়ে গেছে। তাদের মধ্যে আমরা এখনও উদ্বেগ লক্ষ করছি।’
‘নিজেদের চলমান প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন, (সরকারের) কিছু সংস্কার পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা সম্পর্কেও তাদের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ করা যায়। তাই আমি মনে করি, (সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে) দেশকে এগিয়ে নিতে ভবিষ্যতেও যে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে- তাদের এমন বিশ্বাস দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।’
এই বিষয়টি সরকার আসন্ন বাজেট ও উন্নয়ন ফোরামের মতো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন ড. দেবপ্রিয়। এর ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিভিন্ন পক্ষের কাছে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফল দৃশ্যমান হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
তার ভাষ্যে, ‘এর ফলে অর্থনীতির বিভিন্ন প্রকল্পে কিছুটা নিশ্চয়তা আসবে, যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবেন যে (সরকারের সংস্কার কার্যক্রম) কীভাবে এগিয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন: শ্বেতপত্র: দুই বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় গুরুত্বারোপ ড. দেবপ্রিয়র
তবে সংস্কার সফল করতে আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি বলে সতর্ক করেছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এর কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- বাজারে স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা না পেলে সাধারণ মানুষ খুব অস্বস্তিতে পড়বে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলবে।
স্বাগত বক্তব্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ নির্দেশক জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এনায়েতুল্লাহ খান।
তিনি বলেন, ‘কোথায় কী ভুল হয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য কোন কাজটি কীভাবে করলে সঠিক হবে, ড. দেবপ্রিয়র শ্বেতপত্র তা আমাদের জানাবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে আমাদের অনিশ্চয়তার মূল্যায়ন করা কঠিন। তবে এসব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের হাতে এখনও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’