বৃহস্পতিবার জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রামে নতুনভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার অনুরোধ করছে। তবে সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রামে যে সকল শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই ভর্তি করা হয়েছে তাদের কোর্স সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কোনো বিধি নিষেধ থাকবে না।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাণিজ্যিক কোর্সের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। এসব ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলেও এক শ্রেণির শিক্ষক কিন্তু ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তারা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন।’
‘এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়,’ যোগ করেন তিনি।
এর দুদিন পর গত বুধবার দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তাদের মতে, সান্ধ্যকালীন কোর্স পরিচালনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
সংস্থাটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি যথাযথভাবে প্রতিপালন প্রসঙ্গে ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশ দিয়েছে।
বাণিজ্যিক কোর্স পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে এবং এতে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মন্তব্য করার দুই দিন পরই এ নির্দেশনা দেয়া হলো।
চিঠিতে আরও যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অনুষদ, বিভাগ, প্রোগ্রাম বা ইনস্টিটিউট খোলার ক্ষেত্রে আগে ইউজিসির অনুমোদন নেয়া, নতুন পদ সৃজনে অনুমোদন নেয়া, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধি-বিধান ও সরকারের নিয়ম-নীতি প্রতিপালন, বিধি বহির্ভূতভাবে ‘সেশন বেনিফিট’ সুবিধা ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিম্নতর গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত না করা, সরকারি ‘আর্থিক বিধিমালা’ অনুযায়ী আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষানুকূল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অব্যাহত রাখা।
সেই সাথে চিঠিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার জন্য শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে হল, অফিস ও ক্যাম্পাসের সর্বত্র নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, যৌন হয়রানি, র্যাগিং, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু, পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফলাফল প্রকাশ, তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ, একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং এসব কার্যক্রমের যেকোনো বিষয়ে প্রয়োজনে কমিশনের পরামর্শ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।