জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে ২০২৫ সালের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত ১৭ ডিসেম্বর এই আমন্ত্রণ জানান।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, জাতিসংঘ ব্যবস্থায় বহুপাক্ষিকতা প্রসারে বাংলাদেশ বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, খাদ্য ও পানি নিরাপত্তাহীনতা সহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
রাষ্ট্রদূত মুহিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে স্থায়ী প্রতিনিধি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে সম্প্রতি ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত রেজুলেশনে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে রোহিঙ্গা বিষয়ক সর্বাত্মক অংশীজনদের উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনসহ সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য একটি ব্যাপক, সুনির্দিষ্ট এবং সময়সীমাবদ্ধ পরিকল্পনার প্রস্তাবের জন্য সার্বিক সংকট পর্যালোচনা করতে একটি কার্যকর সম্মেলন আয়োজনে মহাসচিবের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেন।
আরও পড়ুন: বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান
জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের দুর্দশায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি ২০২৫ সালে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের জন্য জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং সংকটের দ্রুত ও টেকসই সমাধানের জন্য সম্মেলনের সাফল্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংবিধান প্রভৃতি ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রদূত মুহিতের অসামান্য অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, বহুপাক্ষিকতাবাদে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থেকে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে লাভবান হবে।
বিদায়ী সাক্ষাতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও মহাসচিবের নির্বাহী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পেশাদার কূটনীতিক এবং অস্ট্রিয়া ও ডেনমার্কে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত মুহিত ২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে যোগ দেন।
দায়িত্ব পালনকালে তিনি ২০২৪ সালের জন্য ইউএনডিপি/ইউএনএফপিএ/ইউএনওপিএসের নির্বাহী বোর্ডের সভাপতি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের দ্বিতীয় কমিটির (অর্থনৈতিক ও অর্থনৈতিক) সভাপতি, ২০২২ সালের জন্য জাতিসংঘ শান্তিবিনির্মাণ কমিশনের সভাপতি এবং ২০২৩ সালের জন্য সহসভাপতি এবং ২০২২ সালের জন্য ইউএন উইমেনের নির্বাহী বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চলতি বছরের নভেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ২০২৫-২০২৮ মেয়াদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল সিভিল সার্ভিস কমিশনের (আইসিএসসি) সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: লেবাননে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের