ঘুষ গ্রহণের মামলায় আট বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত দুদকের বরখাস্তকৃত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার দুদকের করা আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। এনামুল বাছিরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান।
পরে আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, ‘এনামুল বাছির তিন বছর পাঁচ মাস ধরে কারাগারে আছেন বলে আপিল বিভাগের শুনানিতে বলেছি। আপিল বিভাগ দুদকের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে হাইকোর্টের দেয়া এনামুল বাছিরের জামিন আপিল বিভাগেও বহাল রইলো। এখন তার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।’
২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম ঘুষ গ্রহণের এ মামলায় রায় দেন।
রায়ে দুদকের বরখাস্তকৃত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন।
এছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে ৮০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে তার আপিল বিচারাধীন রয়েছে।
ওই বিচারাধীন আপিলের সঙ্গে জামিনের আবেদন করা হয় বাছিরের পক্ষে। শুনানি নিয়ে ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। ২২ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালত জামিন স্থগিত করে শুনানির জন্য ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সেটির শুনানি হয়।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান।
ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান।
ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
পরে ৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করে।
একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকে এ মামলায়ও গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তারা কারাগারে।