বগুড়ার ধুনটে এসএইচ কবীর বর্ষণ (১৪) নামের ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর মাদকসেবী বানানোর চেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রের বাবা সদরের বেলকুচি গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট রাজ্জাকুল কবীর বিদ্যুৎ বাদি হয়ে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আটজনের নামে মামলা করেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- ধুনট পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার খান বিজয়, ধুনট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহাগ, ছাত্রলীগ নেতা ইবু মিয়া, সজীব হাসান, নাজমুল হাসান, রিমন হোসেন, সোহাগ মিয়া ও রতন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা ও স্কুলশিক্ষিকা ফৌজিয়া আক্তার বীথি অভিযোগ করে বলেন, বুধবার বেলা ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা বিজয় আমার ছেলে বর্ষণকে ফোন দিয়ে ধুনট সরকারি নইম উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ডেকে নেয়। পরে অন্য নেতাকর্মীরা তাকে মোটরসাইকেলে তুলে সদরের মালো পাড়া এলাকার একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে তার দুই হাত পিঠ মোড়া দিয়ে বেঁধে মারধর করে। এরপর জোর পূর্বক আমার ছেলে মাদকসেবন করে এই স্বীকারোক্তি আদায় করে এবং এর ভিডিও ধারণ করে। ভিডিও ধারণের পর স্কুলব্যাগে গাঁজা ও গাঁজা কাটার সরঞ্জাম রেখে মোটরসাইকেলে করে তারা তাকে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ হলে থানা থেকে ছাত্রলীগের নেতাদের ডাকা হয়। কিন্তু তারা আর থানায় যান নি। পরে আমার জিম্মায় আমার ছেলেকে দিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘থানা থেকে ছেলেকে আনার সময় দেখতে পাই তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান আমার ছেলেকে দেখে বলেন তার মাথা ও নাকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের চাপে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ২ শিক্ষকের পদত্যাগ
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ধুনট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘ওই স্কুলছাত্র আমাদের মহল্লায় এসে গাঁজা সেবন করে। এ ছাড়াও আমাকে হত্যার হুমকি দেয়ায় তাকে ধরে থানায় সোপর্দ করেছি।’
তিনি আরও দাবি করেন, থানার ওসি তার স্কুলব্যাগ থেকে গাঁজা ও গাঁজা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করেন। ওই ছাত্রকে কোনও মারধর করা হয়নি।
ভুক্তভোগীর বাবা রাজ্জাকুল কবীর বিদ্যুৎ বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে (বুধবার) আমি থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মামলা নেননি। এ কারণে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আব্দুল মমিন অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।’
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের গালি দেয়ায় ওই স্কুলছাত্রকে তারা থানায় নিয়ে আসে। তার ব্যাগে গাঁজা কিংবা কোনো মাদক পাওয়া যায়নি। পরে তার অভিভাবকদের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ছাত্র অধিকারের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় বেশ কয়েকজন আহত