সাম্প্রতিক সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে নিপীড়ন, নজিরবিহীন মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি তুলে ধরে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জোর দিয়ে বলেছে, ভিন্নমত ও দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অপরাধ নয়, সাংবিধানিক অধিকার।
এ সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বলপ্রয়োগপূর্বক দমন, অপহরণ ও নির্যাতন বন্ধ করে তাদের সব ন্যায্য দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি।
একইসঙ্গে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানায় টিআইবি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নজিরবিহীন সহিংসতায় রূপান্তর করায় এখন পর্যন্ত ২শরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে।
যৌক্তিক দাবিতে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ বলপ্রয়োগের কারণে এমন রক্তক্ষয়ী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংবিধান দেশের জনগণকে ভিন্নমত প্রকাশ, সমাবেশ, প্রতিবাদ ও দাবি আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকার দেয়। বিষয়টি নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, এর চেয়ে হতাশাজনক আর কী হতে পারে! একটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি, হাজার হাজার আহত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সুশাসন ও জবাবদিহির প্রকট ঘাটতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরছে।’
তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমে এমন বহু শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা উঠে আসছে, যারা আন্দোলনরত ছিলেন না। ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’ ছোড়া গুলিতে হত্যার পাশাপাশি নিজের বাড়িতে বা ছাদে দাঁড়িয়ে গুলিতে নিহত হওয়া সকল মৃত্যুর পিছনে যারা দায়ী, তাদের বিচার হবে কি?”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে এমন তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে দ্বারা শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা, নাগরিকের প্রতিবাদ বা আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। সরকারকে অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে সব পক্ষের মধ্যে একটি আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য একটি সর্বসম্মত রোডম্যাপ তৈরি ও বাস্তবায়ন করে দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতা ও আতঙ্ক দূর করতে আহ্বান জানান ড. জামান।
তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতার অভিযোগে যেভাবে ঢালাও মামলা ও গ্রেপ্তার চলছে, তা কতটা আইনি প্রক্রিয়া মেনে করা হচ্ছে, সেটি দেখতে হবে। এটি যেন কোনোভাবেই নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার উৎসবে পরিণত না হয়।’
বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমনের হাতিয়ার হিসেবে ইন্টারনেট বন্ধ করাকে সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জনগণের ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘন করে দেশকে বর্হিবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে অবাধ তথ্য ও মতপ্রকাশ রোধ করা হয়েছে। দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে আর্থিক লেনদেন ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা, রপ্তানি ও শিল্প উৎপাদনকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলা হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের মতো সেবা পেতে নাগরিকদের অহেতুক হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে।’
ইন্টারনেট বন্ধ রাখা সরকারের সবিরোধী ও সাময়িক সুবিধার স্বার্থে অদূরদর্শিতার প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল করা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পুরোদমে চালু করতে সরকারকে আহ্বান জানায় টিআইবি।
আন্দোলন চলাকালে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিরাপত্তা প্রশ্নের জন্ম দেয় উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমন সংকটে সরকার ভিন্নমত দমনের নীতি থেকে সরে এসে গণতান্ত্রিক ও সুশাসনমুখী পথ অবলম্বন করবে বলে আশা করে টিআইবি।