নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাচীন লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তৃতীয়বারে মতো যৌথভাবে মহান ‘শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপন করেছে। বর্ণীল এই আয়োজনে বিভিন্ন জাতি-বর্ণের মানুষ একত্রিত হয়ে নিজ নিজ মাতৃভাষার জয়গান করেন।
দূতাবাসের এ আয়োজনে ২০টি দেশ সহ-আয়োজক হিসেবে যোগ দেয়। লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের ডিন স্বাগত বক্তব্যে দেন।
চীন, ভারত, ইতালি, ইয়েমেন, পুয়ের্তোরিকো, ইউক্রেন, স্পেন, কসোভো, বলিভিয়া, মরক্কো প্রভৃতি দেশের শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় গান, কবিতা, যন্ত্রসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন।
বিভিন্ন ডাচ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও ডাচ ভাষায় বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা করেন।
বাংলাদেশের শিল্পী তানজিনা তমা এবং বাংলাদেশ দূতাবাস পরিবারের সদস্যবৃন্দ একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ পরিবেশন করেন।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ‘ইশারায় ভাষা শিক্ষার অভিধান’ চালু করল ইউএনডিপি
দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব, বহু ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন ইউনেস্কো-নেদারল্যান্ডসের চেয়ারম্যান ক্যথলিন ফেরিয়ার এবং নেদারল্যান্ডসের বৈষম্য ও বর্ণবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক রবিন বালদেব সিং।
এছাড়া বহু ভাষাতত্ত্ব এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর আলোকপাত করেন লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ‘এসপ্রান্তো’ ভাষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতালীয় অধ্যাপক ফ্রেডরিকো গোবো।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ভাষা আন্দোলনের ৭ দশক পর বাংলাদেশ পৃথিবীর সকল জাতি ও ৭ হাজারের অধিক ভাষাভাষী নৃ-গোষ্ঠির সঙ্গে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ধারণ করার জন্য একাত্মতা প্রকাশ করে। বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে সঙ্গতি, বহুত্ববাদ, বৈচিত্র্য ইত্যাদির ধারক ও বাহক।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তাধারার প্রতিফলন হিসেবে দূতাবাস ও লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয় একত্রে সৃষ্টিশীল পোস্টার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যা নেদারল্যান্ডস এ বসবাসরত শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ভাষার ওপর এক স্বতঃস্ফূর্ত কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন: মাতৃভাষা শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে ডাচ-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতণ কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন থিংক-ট্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ আয়োজন বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। ইউক্রেন দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ দূতাবাসের এ আয়োজন পৃথিবীর সকল দেশের স্বতন্ত্র ভাষা-সংস্কৃতি, বর্ণ ইত্যাদির ধারণ ও বাহন করার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।’
এছাড়া সকালে রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের পরিবার সদস্য, নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা দি হেগ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত স্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
আরও পড়ুন: ৯টি দেশের শিল্পীদের বর্ণাঢ্য অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত