গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর টানা চতুর্থবার এবং মোট পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
বিদেশি কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ৭৬ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রীকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল (এএলপি) সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করার একদিন পর এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা গত ৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সালে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর থেকে তিনি তার নিজের জেলার এই আসন থেকে কখনও হারেননি।
শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ তাণ্ডবে প্রাণে বেঁচে যান। তখন তারা জার্মানিতে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের একমাত্র বেঁচে যাওয়া এই দুই বোন জার্মানি থেকে ভারতে পাড়ি জমান।সেখানে প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটান তারা।
ভারতে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং অবিলম্বে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য প্রচার শুরু করেন।
পরে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, যার ফলে ১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের পতন ঘটে। তবে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কাছে পরাজিত হয়।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথমবারের মতো ১৯৯৬ সালের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।
২০০১ সালে শেখ হাসিনা প্রথম নেতা হিসেবে পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগ করেন এবং সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরিচালিত নির্বাচনে তার দল পরাজিত হয়।
আরও পড়ুন: মন্ত্রিসভা গঠনে শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
সামরিক সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি পুনরায় তার দল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ২০০৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারির তিনটি নির্বাচনেও জয়ী হন।
২০১৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের বর্জনের কারণে শেখ হাসিনার দল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৩ টিতে জয়লাভ করে। বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। সরকার নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি প্রত্যাখ্যান করায় বিএনপি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকেও দূরে ছিল।
২০১৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের বয়কটের কারণে শেখ হাসিনার দল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩০০ টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৩ টিতে জয়লাভ করে। বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। সরকার নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি প্রত্যাখ্যান করায় বিএনপি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকেও দূরে ছিল।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় ২২২টি আসন। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬২টি এবং জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন।
আরও পড়ুন: নতুন মন্ত্রিসভায় ২৫ মন্ত্রী, ১১ প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিলেন রাষ্ট্রপতি