পদ্মা নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দেওয়ায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ রয়েছে। পদ্মা পাড়ের প্রায় ২৫ মিটারের মতো অংশ ভেঙে যাওয়ায় ৪ নম্বর ফেরি ঘাটসহ স্থানীয় বসতভিটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরা।
বর্তমানে দৌলতদিয়ার ৪টির মধ্যে মাত্র দুটি ফেরি ঘাট চালু রয়েছে। এতে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
ফেরি ঘাট এলাকার বাসিন্দারা জানায়, শুক্রবার মধ্যরাত সোয়া ১টার দিকে ৪ নম্বর ফেরি ঘাটের পন্টুনের সামনে থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে পদ্মার পাড় ভাঙতে থাকে। এতে করে এলাকায় আতঙ্ক দেখা যায়। এসময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘাটটি বন্ধ করে দেয়। এর আগে রাত ১টার দিকে ওই ঘাট থেকে একটি রো রো (বড়) ফেরি যানবাহন বোঝাই করে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
৪ নম্বর ফেরি ঘাটের পন্টুনের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) লস্কর শামসুল আলম বলেন, ‘রাত ১টার দিকে ঘাট থেকে রো রো ফেরি শাহ মখদুম ফেরি যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সোয়া ১টার দিকে পন্টুনের পূর্ব দিক থেকে অনেক জায়গা জুড়ে মাটি ধস হতে শুরু করে। রাত ২টা থেকে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে রেকার এনে ঘাটটি টেনে উপরে তোলা হয়।’
আরও পড়ুন: ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-ক্যানেলে তীব্র ভাঙন, ঝুঁকিতে শতাধিক পরিবার
শনিবার দুপুরে দেখা যায়, ৪ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কের ওপর বিআইডব্লিউটিসির রেকার রাখা হয়েছে। মোটা রশি দিয়ে পন্টুনটি টেনে রাখা হয়েছে যাতে স্রোতে না ভেসে যায়। র্যাম থেকে প্রায় ১০০ ফুট এলাকা নদীতে ধসে যাওয়ায় সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ঘাট এলাকার ১০টি পরিবারও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়েছে।
ফেরিঘাট সংলগ্ন চা দোকানি মনির ফকির বলেন, ‘রাত ১টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শুনি ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। হঠাৎ এভাবে ঘাট ভেঙে যাওয়ার কথা শুনে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ঘাট থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে আমার চায়ের দোকান। এর অদূরে নিজেদের বসত বাড়ি। এভাবে ভাঙতে থাকলে দোকান, বাড়িঘর কিছুই রক্ষা করতে পারব না।’
স্থানীয় শাহাদৎ মেম্বার পাড়ার হোসেন ফকির, নুরু শেখসহ কয়েকজন বলেন, কয়েকদিন ধরে পদ্মার পানি অনেক কমতে থাকায় নিচের লেয়ার নামতে শুরু করেছে। যে কারণে নদীর ভাঙন ঠেকাতে পাড়ে ফেলা বালুভর্তি জিওব্যাগের চাপ পড়ায় ধসে পড়তে শুরু করেছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না হলে ঘাটসহ স্থানীয় বাড়িঘর রক্ষা করা সম্ভব না।
ঘাটে উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএর সংরক্ষক শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রায় ২৫ মিটার এলাকা নদীতে ধসে গেছে। খবর পেয়ে সকাল থেকে ঘাটে অবস্থান করছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাঙন পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কর্মকর্তারা।’
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ায় চারটির মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল ছিল। বর্ষায় তীব্র স্রোতের কারণে ৬ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। ভাঙনে ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ থাকায় বর্তমানে ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। দ্রুত ঘাটটি সচল করতে বিআইডব্লিউটিএকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ভাঙন ঠেকাতে ট্রাকে করে বালু এনে জিওব্যাগ ফেলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘাট চালু করতে হয়তো দুই-তিন লাগতে পারে।