সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ও রাশিয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিসহ সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ম্যানতিতস্কির সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।
বৈঠক শেষে হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশে আরও রাশিয়ান বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।’
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত এবং বিমসটেক মহাসচিবের সাক্ষাৎ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়ার ভূমিকা এবং বাংলাদেশের পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় রাশিয়ার সমর্থনের কথাও স্মরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (সোভিয়েত ইউনিয়ন) বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির পথে আন্তর্জাতিক চাপ ও বাধাকে রুখে দিয়েছিল।
১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্যতম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং অবশেষে জাতিসংঘে যোগদানে বাংলাদেশকে তার মূল্যবান সহায়তা করেছিল।
হাছান মাহমুদ বলেন, উভয় পক্ষ কিছু বিচারাধীন সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান কানেক্টিভিটির প্রশংসা জয়শঙ্করের
রুশ মুদ্রার বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা যদি কয়েকটি দেশের সঙ্গে এটি করতে পারি, তাহলে নির্দিষ্ট কিছু মুদ্রার ওপর আমাদের নির্ভরতা কমে আসবে। এটা শুধু রাশিয়ার সঙ্গে নয়, যেকোনো দেশের সঙ্গেই। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কারিগরি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন; সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান। 'আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে'
তিনি বলেন, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও দুই দেশ কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যে অভিযোগ করেছে তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত।
‘আমি বুঝতে পারি যে পছন্দটি আপনার লোকেরা নিয়েছিল। আমরা কোনো দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না, বিশেষ করে বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশে। এটা এক ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য বা মিথ্যা তথ্য। ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে ৪১ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বিশ্বাস করবেন না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দাবির বিষয়ে এক সাংবাদিকের অনুসন্ধানের জবাবে এই বিবৃতি দেওয়া হয়।
গয়েশ্বর বলেছিলেন যে, বর্তমান সরকার বাংলাদেশী জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়নি বরং এর পরিবর্তে ‘বিদেশি শক্তির ওপর ভর করে প্রতিষ্ঠিত’, বিশেষ করে ভারত, চীন এবং রাশিয়ার নাম উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গ্রেপ্তারদের বিষয়ে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রায় ৪১ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, রাশিয়া অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি বজায় রাখে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির নীতি 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়' উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলকে বাদ দিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'আমরা ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রধান বিশ্বশক্তির সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখি এবং সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করি।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে তারা বৈধতা দেয়না।
আরও পড়ুন: বিএনপির গয়েশ্বরের অভিযোগ নাকোচ করলেন রুশ রাষ্ট্রদূত