সারা সপ্তাহের লেনদেনে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। লেনদেন বৃদ্ধি আর সূচকের উত্থানের পাশাপাশি ঢাকার বাজারে মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ কয়দিনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬১ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শলিয়াভিত্তিক ডিএসইএস ৬ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৬ পয়েন্ট।
ঢাকার বাজারে প্রতিদিনকার লেনদেন বেড়েছে ৩৪ শতাংশেরও বেশি। জুনের শেষ সপ্তাহেও যেখানে গড় লেনদেন ছিল ৩৬২ কোটি টাকা, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বেড়ে হয়েছে ৪৮৬ কোটি টাকা।
সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে ২৫৭ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১০৩ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
খাতভিত্তিক লেনদেনে সিরামিক, খাদ্যপণ্য এবং পাটখাত বাদে দাম বেড়েছে সবকটির। বিশেষ করে ব্যাংকখাতে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৫ দশমিক ১৪ শতাংশ, লেনদেন বেড়েছে ৭২ দশমিক ২০ শতাংশ।
পড়ুন: পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টায় সূচকের উত্থান, দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির
তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ৩০ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ২ এবং অপরিবর্তিত আছে ৪ ব্যাংকের শেয়ারের দাম। ব্যাংক ছাড়াও ভালো অবস্থানে আছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান; শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯৫ দশমিক ২৩ শতাংশ, লেনদেন বেড়েছে ৬৫ শতাংশ।
ঘুরে দাঁড়িয়েছে বীমাখাত: সাধারণ বীমার তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫৫ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং জীবনবীমা খাতে দাম বেড়েছে ৬৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। সর্বশেষ ৫৩ দশমিক ৮০ টাকায় ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে ভালো অবস্থানে আছে লাভেলো, বিচ হ্যাচারি, অগ্নি সিস্টেমস, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস।
ব্লক মার্কেটে সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি হয়েছে লাভেলোর। এছাড়া ব্যাংকের মধ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রিতে শীর্ষে আছে।
দরবৃদ্ধিতে ঢাকার বাজারে শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক। এক সপ্তাহের লেনদেন ব্যাংকটির শেয়ার থেকে রিটার্ন এসেছে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৩৩ দশমিক ৬০ টাকায় প্রতিটি শেয়ার লেনদেন দিয়ে সপ্তাহ শুরু করলেও শেষ কার্যদিবসে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৪ দশমিক ১০ টাকা।
অন্যদিকে সর্বোচ্চ দর হারিয়ে গত সপ্তাহে তলানিতে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ। কোম্পানিটির সাপ্তাহিক রিটার্ন কমেছে ১১ শতাংশের বেশি। ১ হাজার ৭৩৬ টাকা দরের প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে হয়েছে ১ হাজার ৫৩৯ টাকা।
ইতিবাচক সিএসই
ঢাকার মতোই সূচকের বড় উত্থান হয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সপ্তাহজুড়ে চট্টগ্রামের সার্বিক সূচক বেড়েছে ২২৮ পয়েন্ট।
সারা সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩১৯ কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগের দাম বেড়েছে। ২২২ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৭০ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও শীর্ষে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। এক সপ্তাহে সম্মিলিতভাবে ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।
সিএসইতে দরবৃদ্ধির তালিকায় ভালো অবস্থানে আছে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, রূপালি ব্যাংক, বঙ্গজ লিমিটেড এবং এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাসট্রিজ।
দরপতনের তালিকায় সিএসইতে শীর্ষে নিটোল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, লাভেলো, বার্জার পেইন্টস এবং কাশেম ইন্ডাসট্রিজ।
পুঁজিবাজারের দরবৃদ্ধি প্রসঙ্গে সর্বশেষ শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার এম. আলী আকবর বলেন, পুঁজিবাজার খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যারা বাজারে বিনিয়োগ করতে চান তাদের জন্য এটা উপযুক্ত সময়।
পড়ুন: সূচকের পতনে লেনদেন চলছে পুঁজিবাজারে
পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে বিএসইসি তৎপর উল্লেখ করে কমিশনার আকবর জানান, যারা বাজার অনিয়মের সঙ্গে জড়িত—তাদের জরিমানা করার প্রক্রিয়া বহাল থাকবে। হয় তারা জরিমানার টাকা শোধ করবেন, আর না হলে আদালতে আপিল করবেন। জরিমানা মওকুফের কোনো সুযোগ কমিশন দেবে না।