পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ‘আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত’ বিশ্বের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যেখানে প্রতিটি ভাষার মূল্য ও সম্মান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পৃথিবী অবিশ্বাস্যভাবে বৈচিত্র্যময়, বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভাষাগত পটভূমির লোকেরা একসঙ্গে বাস করে এবং কাজ করে। এছাড়া এই বৈচিত্র্য কখনও কখনও ভুল বোঝাবুঝি এবং দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা বিভাজন এবং উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন,‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত সম্প্রীতি তৈরির জন্য কাজ করি। ২১ ফেব্রুয়ারির চেতনা সবার মধ্যে সঞ্চারিত হোক।’
মঙ্গলবার শাহরিয়ার আলম ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপু এবং কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনে বিজয় বাঙালিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে।
১৯৫২-এরভাষা আন্দোলনের পর আমাদের ইতিহাসের সমস্ত মাইলফলক প্রতিনিধিত্ব করেছিল-১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং অবশেষে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা - সেই চেতনা ও আদর্শে প্রভাবিত হয়েছিল।
শাহরিয়ার আলম বলেছেন,‘সম্ভবত, আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবন দিয়েছি। বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের মাতৃভূমির সাহসী সন্তানরা। আমাদের সুবিধার জন্য, ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনকে গতি ও শক্তি দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় তার প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন এবং তিনি এটি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে করেছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলার জন্য বাঙালিরা জীবন উৎসর্গ করেছে এবং মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে সেই বাংলা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করাই উদ্দেশ্য ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে বোঝার জন্য এবং স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কৃতজ্ঞ।’ একটি জাতিকে বোঝার সর্বোত্তম উপায় হল তারা যে ভাষায় কথা বলে তা শেখা।
তিনি বলেন ‘আমাদের উচিত এই দিনে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভাষার সমৃদ্ধি উদযাপন করা, পাশাপাশি একে অপরের প্রতি বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধার প্রচার করা।’
তিনি বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব দূর করার জন্য আরও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ শুরু করা এবং প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে ফেলা উচিৎ।
তিনি বলেন, আমাদের উদ্যোগের ইতিবাচক ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সম্প্রীতি প্রচারে আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি তার উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করতে আমরা সকল স্তরের সরকারি ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যুবকদের সম্পৃক্ত করতে পারি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির এই যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী হাতিয়ার হতে পারে।