প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা এবং আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি এড়াতে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন নারী নেত্রীরা।
এসময় তারা বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার দাবি জানান।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) নারী নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের কথা শোনেন এবং সুপারিশগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে উল্লেখ করে রিজওয়ানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সবার কথা শোনা এবং আমাদের যে বৃহত্তর সংস্কার পরিকল্পনা রয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের মতামত নেওয়া।’
তিনি বলেন, অগ্রাধিকার প্রস্তাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এসব পরিবর্তন আনতে না পারলে দলীয় সরকারের অধীনে তা করা কঠিন হতে পারে।
রিজওয়ানা বলেন, 'এক ঘণ্টার বৈঠকে আমরা সব কিছু চূড়ান্ত করতে পারব না। এগুলো অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কোনো প্রস্তাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো নেতিবাচক অবস্থান নেই।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ রয়েছে তবে প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করার প্রস্তাব রয়েছে।
রিজওয়ানা এমন একটি ফাউন্ডেশন তৈরির কথাও বলেছিলেন, যেখানে মানুষ আর্থিক সহায়তা করতে পারে। তবে ফাউন্ডেশন তৈরির জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন থাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য কিছু করার দাবিও ছিল।
নারীদের সমস্যাগুলো আলাদাভাবে মোকাবিলা না করে নারী অধিকার কমিশন গঠন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তারা বাংলাদেশ তথ্য কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সত্যিকার অর্থে ক্ষমতায়িত করার প্রস্তাব করেন।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রসঙ্গে একজন নারী শিক্ষার্থী সমন্বয়ক বলেন, বিগত সরকারের ছাত্র শাখার সদস্যদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন তিনি।
রিজওয়ানা নারী শিক্ষার্থীকে উদ্বৃত করে বলেন, ‘তিনি বলেছেন, আমি এখানে এ বিষয়ে কথা বলতে আসিনি। কিন্তু পুরো ব্যবস্থাটাই বদলাতে হবে, যাতে নারীর প্রতি সহিংসতায় জড়িতরা যেন শাস্তি থেকে রেহাই না পায়।’
সমাজকে নারীবান্ধব করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে কল্পনা চাকমা, তনু ও নুসরাতের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়-বিভাগকে যত দ্রুত সম্ভব কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
রিজওয়ানা বলেন, শুধু নারীদের সমস্যা নিয়ে নয়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য 'বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন'র মাধ্যমে এসব কাজ করা যায় কিনা তা দেখার প্রস্তাব রয়েছে।
এনজিওগুলো যাতে এনজিও ব্যুরোর হয়রানির শিকার না হয়, সে দাবিও জানান অংশগ্রহণকারীরা।
শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়োগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম ও ফরিদা আক্তার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, শিরিন হক, সামিয়া আফরিন, সীমা দাস সিমু, তাসলিমা আক্তার, রিতু সাত্তার, বিথী ঘোষ, সুলতানা বেগম, নিগার সুলতানা, সুফিয়া রহমান, তাসকিন ফাহমিনা, মেঘনা গুহঠাকুরতা, রানী ইয়ান ইয়ান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, শাহীন আনাম, নিরূপা দেওয়ান, অধ্যাপক ফাহমিদা খাতুন, শ্যামলী শীল, আইরিন খান ও নাবিলা ইদ্রিস বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুসহ প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার