তিনি বলেন, ‘বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশের সকল দেশ বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন থেকে দিকনির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণা নিতে পারে।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার রাতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের সাউথ এশিয়া সেন্টার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশে বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্মরণীয় বক্তৃতাটি লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের অংশ ছিল, যা বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২০১২ সালে পালন করছে বাংলাদেশ সরকার এবং ইউনেস্কো।
অমর্ত্য সেন বলেন, বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতার যে ধারণা দিয়েছিলেন তা ধর্মনিরপেক্ষতার পশ্চিমা সংস্করণ থেকে আলাদা ছিল।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ এবং দার্শনিক বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে মানুষের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে না তা বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন না।
তিনি বলেন, “শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনজুড়ে ‘স্বাধীনতা’ ধারণাটি ছিল বিস্তৃত। উদাহরণস্বরূপ, বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব মানুষের নিজস্ব ভাষা ব্যবহারের স্বাধীনতার প্রতি তার মনোনিবেশ থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে: রাষ্ট্রদূত
অবিভক্ত পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনে, সাম্যবাদী ধারণাগুলো শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের চিন্তাধারায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, বলেন তিনি।
অমর্ত্য সেন বলেন, “১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ভাষণে ভোটারদের সামনে ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ‘সমতার’ ধারণা তুলে ধরতে দ্বিধা করেননি বঙ্গবন্ধু। সমতাবাদী এই নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সেক্যুলার অবস্থান ভোটে জিতে আসতেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।”
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার সার্বজনীন ধারণার মধ্যে একটি সমান্তরাল রেখা টেনে অধ্যাপক সেন বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বিশ্ববন্ধু’ বা ‘বিশ্বের বন্ধু’ বলা খুব বেশি কিছু হবে না, কারণ তার ধারণাগুলো সহজেই সারা বিশ্বের মানুষের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু’ বা ‘বাংলাদেশের বন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমানকে বর্ণনা করার জন্য অত্যন্ত বিনয়ী একটি শব্দ। মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধুর’ চেয়ে বড় পদবি চাননি এবং ‘বন্ধুত্ব’ নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। এটি তার সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলে: তিনি নাম বা গৌরব অর্জন করতে চাননি। সহজাতভাবেই মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করত।”
বঙ্গবন্ধুর জীবনের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা: কৃষিমন্ত্রী
মুজিব বর্ষের সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের এটিই প্রথম আলোচনা। বাংলাদেশের সাথে তার দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেশ কয়েকবার ঢাকা সফর করেছেন।
সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং লিঙ্গ সমতায় সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন অধ্যাপক সেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
অমর্ত্য সেন বর্তমানে থমাস ডব্লিউ ল্যামন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিচালক অধ্যাপক মিনোশ শফিকের সঞ্চালনায় ভার্চ্যুয়াল এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের সাউথ এশিয়া সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আল নূর ভিমানি এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রকাশ করুন: আইজিপি