বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশেনের জমিতে ২৮তলা ভবনে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করে ভোগ দখলের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিটের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য হাইকোর্ট আগামী ১৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।
আদালতে বোরাক রিয়েল এস্টেটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন, তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আবু তালেব।
অন্যদিকে ডিএনসিসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম নীলিম।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আইনজীবী ছিলেন ইমাম হাসান। সিভিল এভিয়েশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাইফুর রশিদ।
‘সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’- শিরোনামে ১ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন (ঢাসিক) ও বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১১ জুন রিট করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন।
স্থানীয় সরকার সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র এবং বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এরপর গত ২৯ আগস্ট এই আদালত শেরাটন হোটেল ভবন বণ্টনের চুক্তি চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে। একই সঙ্গে শুনানির পরবর্তী তারিখ ৯ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেয় আদালত।
এরপর ৯ অক্টোবর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট শেরাটন হোটেলের ২১ থেকে ২৮ তলার বণ্টন ও ভাঙার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য বলেন। এরই মধ্যে ভবন নির্মাণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মানা হয়নি উল্লেখ করে শেরাটনের ২০ তলার উপরের অংশ ভেঙে ফেলতে গত ৩০ নভেম্বর রাজউককে চিঠি দিয়েছে পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার হোটেল শেরাটন নিয়ে সার্বিক বিষয়ে ফলোআপ শুনানির দিন ধার্য ছিল হাইকোর্টে। বোরাক রিয়েল এস্টেটের আইনজীবী মো. আবু তালেব বলেন, আদালতের জারি করা রুলের ওপর শুনানি হয়েছে। আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। তবে সিভিল এভিয়েশনের আইনজীবী শুনানির জন্য সময় চাইলে আদালত ১৮ জানুয়ারি পরবর্তী দিন রেখেছেন।
আইনজীবী মো. আবু তালেব আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গত ৯ অক্টোবর মাননীয় হাইকোর্ট ডিভিশন ভবনের ২১ থেকে ২৮ তলার ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাস-কো) বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আদেশ দেন। এমন অবস্থায় ২০ মাথার উপরের অংশ ভেঙে ফেলতে রাজউককে এধরনের চিঠি দিতে পারে না বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। আমরা ইতোমধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর ওই মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদেরকে আদালত অবমানার নোটিশ দিয়েছি।’
গণমাধ্যমে ‘বনানীতে ২৮তলা ভবন সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’-শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসে কীভাবে ১৪তলার চুক্তি করে ২৮তলা ভবন বানিয়ে ভোগদখল করছে বোরাক রিয়েল এস্টেট। অথচ জমির মালিক সিটি করপোরেশন।
এ রিপোর্ট প্রকাশের পর ৪ জুন ওই ভবন নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে দুদকে অভিযোগ দেন ব্যারিস্টার সুমন।
এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গা নিয়ে ডিএনসিসির সঙ্গে ২০০৬ সালে একটি চুক্তি হয় বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের।
বোরাকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূর আলীর সঙ্গে চুক্তিতে বলা হয়, বনানী কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে ও বনানী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে সিটি করপোরেশনের জমিতে ‘বনানী সুপার মার্কেট কাম হাউজিং কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হবে। ভবনের ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন, ৭০ শতাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে যে বনানীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন অসম চুক্তি কীভাবে হয়? এ চুক্তিতেই দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যায়। আর এটি নিশ্চিত হয়েছে যেভাবে তা হলো, যে ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন সে ভাগের সম্পদের মূল্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সে হিস্যা গত এক দশকেও বুঝে পায়নি সিটি করপোরেশন। উল্টো চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪তলার স্থলে ২৮তলা ভবন নির্মাণ করে পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বোরাক।
ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, ২০০৬ সালে চুক্তি হয়। ২০১০ সালে সেটি হস্তান্তর করার কথা ছিল। সেখানে এখন ২০২৩ সাল চলে। প্রায় ১৪ বছর ধরে বোরাক রিয়েল এস্টেট শেরাটন হোটেলের মতো একটি আন্তর্জাতিক হোটেল তারা নিয়ে আসছে, কিন্তু একটি টাকাও এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন পায়নি। সেসময় মেয়র ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কীভাবে এমন অসম চুক্তি করতে পারেন- প্রশ্ন তোলেন ব্যারিস্টার সুমন।
তিনি বলেন, যে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন তিনি কীভাবে একটি বেসরকারি রিয়েল এস্টেটের মালিককে রাষ্ট্রের সম্পত্তির ৭০ ভাগ মালিকানা দিয়ে দেন। এটা আমার বোধগম্য হয় না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার মনে হয় নূর আলীর মুখোমুখি হওয়ার মতো শক্তি আমাদের সিটি করপোরেশনের নেই।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, নতুন বাজেটে যাদের শুধু টিন আছে তাদেরকেও দুই হাজার টাকা কর ধার্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। কষ্ট করে হলেও এ টাকা আমরা হয়ত দেবো। কিন্তু সেখানে ১৪ বছর ধরে কোটি কোটি টাকা পড়ে আছে আপনারা সেখানে কিছুই বলবেন না? এ কারণে আমার মনে হয়েছে একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমার এ অভিযোগ করা উচিত।