চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ব্রাজিল।
চলতি বছরের ২৮ জুলাই ব্রাজিল সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'ডিক্যাব টক'-এ কূটকনৈতিক প্রতিবেদকদের সঙ্গে আলাপকালে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস বলেন, ‘এটি একটি দ্বিপক্ষীয় সফর। প্রেসিডেন্ট লুলার সঙ্গে ক্ষুধার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি শুরু করতে পারেন তিনি এবং তারপরে তিনি পুরো অপেরা সফরের সমস্ত অনুষ্ঠানের জন্য ব্রাসিলিয়ায় যাবেন।’
তিনি বলেন, এটি ল্যাটিন আমেরিকার কোনো দেশে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হবে। দেশটিকে একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখা হয়।
তিনি বলেন, পারস্পরিক যোগাযোগ আরও সহজতর করতে বাংলাদেশে একটি ভিসা সেন্টার খোলার পরিকল্পনা করছে ব্রাজিল।
প্রতি মাসে তারা ২৫০ থেকে ৩০০ ভিসার অনুরোধ পাচ্ছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা মনে করি, ঢাকায় আমাদের খুব সেবা তরান্বিত করা উচিত।’
তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং আমরা দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছি, কিন্তু তারা এখানে বাংলাদেশে এটা (টেন্ডার) করবে না। তৃতীয় কোনো দেশে তারা এটা করবে। কারণ যেসব কোম্পানি এ ধরনের সেবা দিচ্ছে তারা আন্তর্জাতিক কোম্পানি।’
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।
আমন্ত্রণপত্রের পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বৈত কর পরিহারে একটি চুক্তির প্রস্তাব ব্রাজিলের কাছে পাঠিয়েছে, যা সফরকালে সই হতে পারে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতায় মাঝেমধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের বেতনের উপর দ্বৈত কর পরিহারে একটি চুক্তির প্রস্তাব করা হয়।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার প্রথম ঢাকা সফর গত ৭ থেকে ৮ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'মন্ত্রীর সফরের সময় আমরা কেবল একটি নথি সই করতে পেরেছিলাম, সেটি ছিল কারিগরি সহযোগিতার কাঠামোগত চুক্তি। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি কারণ আমাদের কাঠামোতে, এই ধরনের চুক্তি আপনাদের সবকিছু করতে দেয়। চুক্তি ব্যবহার করে আমরা অন্য এলাকায় বা প্রতিটি এলাকায় যেতে পারব। আমরা কৃষি, রাসায়নিক শিল্পে যেতে পারি, আমরা অন্য যা কিছুই চাই তা করতে পারি।’
তিনি বলেন, তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিকল্পগুলোও খতিয়ে দেখছেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ব্রাজিলের বিনিয়োগকারীদের জন্য এক ধরনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে, কারণ চীন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে, এজন্য তারা অন্য জায়গা খুঁজছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তাই তারা চীনের আশপাশের দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। তারা এখন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় অবস্থান করছে। তারা বাংলাদেশে আছে। কিন্তু আমি যা বলছি, তা হলো তারা যখন এখানে আসে এবং তারা নিজেরাই বিষয়গুলো দেখে ব্রাজিলে ফিরে লোকদের কাছে বিষয়গুলো সম্পর্কে বলে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি মনে করি একটি ক্ষেত্রে আমরা খুব আকর্ষণীয় সহযোগিতা করতে পারি তা হলো- ইথানল।’
এটি জ্বালানি উৎপাদনেও ব্যবহার করা যাবে বলে জানান তিনি। এটি তেলের চেয়ে অনেক সস্তা। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিলে, ইথানল আরও ভালো বিকল্প। সুতরাং ভারতের সঙ্গে ইথানল নিয়ে আমাদের আলোচনা রয়েছে, যা তারা তাদের নিজস্ব প্রোগ্রাম তৈরি করছে। তাই আমরা চিন্তা করেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে কেন এটা করা হবে না?
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্রাজিল থেকে জীবিত গরু পাওয়া সম্ভব, তবে প্রক্রিয়াটি 'জটিল'। তিনি বাংলাদেশে এই শিল্পের উন্নয়নে মাংস ও অন্যান্য সহায়তার প্রস্তাব দেন।
এর আগে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, তারা প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ব্রাজিল সফর নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট লুলার আমন্ত্রণ এসেছে। আগামী জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্রাজিল সফর হতে পারে।’
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের একটি ব্যক্তিগত চিঠি নিয়ে আসেন, যা তিনি বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন শেখ হাসিনা
গত বছরের ২৪ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট লুলার মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠকে দুই নেতা সমাজে মর্যাদা, টেকসই উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও শান্তি বিরাজমান রাখাল লক্ষ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিন্ন লক্ষ্যের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ ও ব্রাজিল গ্লোবাল সাউথের অন্যতম শক্তি।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সরকারের অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছে বৈষম্য হ্রাস, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আমাদের সমাজের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।’
তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সমানভাবে আশাব্যঞ্জক, যা ২০২৩ সালে প্রায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বাণিজ্য বহুমুখীকরণের উপর জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সোমবার অনুষ্ঠিতব্য এই ব্যবসায়িক বৈঠকটি তাদের উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগ এবং সুযোগের সন্ধানে উপযোগী হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী