বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেছেন, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) সাম্প্রতিক রায় ৭৫ বছরের সংগ্রামের পর আশাবাদের অনুভূতি দিয়েছে। এর উপর ভিত্তি করেই তাদের কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এগিয়ে যাওয়ার এটিই প্রথম ধাপ… আমরা এর ওপর ভিত্তি করে কাজ করতে পারি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমিকার জন্য তারা কৃতজ্ঞ।
আইসিজের কার্যক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তি উপস্থাপনে বলেছে- ইসরায়েল গাজায় সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে। যার শুরু হয় ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর। যে ঘটনায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন। ওই হামলায় প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়।
আরও পড়ুন: কাম্পালায় ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হাছান মাহমুদের সাক্ষাৎ
চলতি মাসের শুরুর দিকে মৌখিক শুনানির সময় মামলাটি খারিজ করতে আইসিজের বিচারকদের প্রতি আবেদন করেছিল ইসরায়েল। যে প্রস্তাব গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) প্রত্যাখ্যান করা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আজ বলেছেন, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের যুগান্তকারী এই রায় গাজার বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় আশার আলো দেখাচ্ছে। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, ধ্বংসযজ্ঞ, গণহত্যার শিকার এবং আহত হওয়া পাশাপাশি অপূরণীয় মানসিক আঘাত সহ্য করছে গাজাবাসী।
তারা আরও বলেন, ‘এই রায় ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়বিচারের জন্য কয়েক দশকের দীর্ঘ সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’
আইসিজে মনে করছে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল হতে পারে। ৬টি অস্থায়ী ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। সেগুলো হলো- গণহত্যার উসকানি প্রতিরোধ ও শাস্তি দেওয়া, গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের কাছে সহায়তা ও পরিষেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করা এবং গাজায় সংঘটিত অপরাধের প্রমাণ সংরক্ষণসহ গণহত্যা কর্মকাণ্ড রোধে ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আরও পড়ুন: ন্যাম সম্মেলন: ফিলিস্তিনিদের সমর্থন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
তারা বলেন, ‘আমরা আদালতের সংক্ষিপ্ত দুই সপ্তাহের আলোচনায় প্রদর্শিত গুরুত্ব অনুভব করি। কারণ ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন নারী ও শিশুসহ শত শত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। এর ধারাবাহিকতায় গাজায় ৩ মাসে ২৬ হাজার ৭৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা তাদের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের বেশি।’
বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি সাহসী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, ইসরাইল অপরাধ ও গণহত্যা করেছে।
রাষ্ট্রদূত ইউসুফ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সমাধান খুঁজে বের করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন, তবে এই ‘কঠোর পরিশ্রম আরও আগে দেখানো উচিৎ ছিল’।
তিনি বলেন, ‘ইস্যুটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে কথা বলুন।’
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি ইউরোপের ঐক্যের কথাও উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে ৯ বছর অবস্থানকালে তার নিজেকে কখনো শরণার্থী মনে হয়নি। কারণ এখানকার মানুষের কাছ থেকে তিনি সবসময় উষ্ণতা ও ভালোবাসা পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।
আরও পড়ুন: এই বড়দিনে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি: মোমেন