বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
নিউ ইয়র্কে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সরকারি দায়িত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ জাতিসংঘের অনেক কর্মযজ্ঞে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে এবং সেই কারণেই আমরা বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি।'
জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল যুগের সুবিধা সবার জন্য নিশ্চিতের আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে সে দেশের সেনাবাহিনী তরুণ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকে মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিযোজন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলার সক্ষমতার প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান নিম্ন আয়ের দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করলে গুতেরেস এ বিষয়ে বিশ্বসংস্থার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ জন্য বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করা উচিৎ, শাস্তিদান নয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাতসহ চলমান বিশ্বের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মহাসচিবকে তার নেতৃত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘রাফায় সংঘাত এড়াতে সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব যেভাবে নিজে উপস্থিত হয়েছিলেন, শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী তার প্রশংসা করেছে।’
এ সময় রোহিঙ্গা সঙ্কটের উপর বিশ্বের আলোকপাত বজায় রাখা, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতির উন্নতি করতে জাতিসংঘের জোরদার ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: গাজায় বিপুল পরিমাণ ত্রাণ দেওয়ার সময় এসেছে: জাতিসংঘ মহাসচিব
জাতিসংঘ মহাসচিব গত দশকে বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতির প্রশংসা করলে ড. হাছান মহাসচিব গুতেরেসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ অনেক আগেই সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবিক সূচকসহ সব সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং গত কয়েক বছরে অনেক সূচকে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে মাথাপিছু আয়েও ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের দৃঢ় অংশীদারিত্ব এবং উন্নয়নে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের জাতিসংঘে যোগদানের অর্ধশত বছরপূর্তিতে গুতেরেসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা ও মিশনের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: গাজা ও সুদানে রমজান মাসে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের