বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। এতে রাজস্ব আয়ের ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে মাহমুদ আলী প্রথম বাজেট বক্তব্যে বলেন, এতে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে আরও ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা যোগানের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণের প্রস্তাব করেন তিনি।
৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের এটিই প্রথম বাজেট।
বাজেট প্রণয়নের সময় সরকার মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস এবং রপ্তানি ও আমদানি হ্রাসের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া অর্থবছরে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ হবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। এ বছর জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা মূল প্রক্ষেপণ ৭ দশমিক ৫ শতাংশের কম।
আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী। যা বর্তমান মূল্যস্ফীতির প্রায় ১০ শতাংশের প্রেক্ষাপটে একটি লম্বা আদেশ প্রমাণ করতে পারে।
আরও পড়ুন: জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ অর্থবছর: জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬.৭৫ শতাংশ
আসন্ন অর্থবছরের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার একটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে।
মাহমুদ আলী বলেন, 'সম্পদ বরাদ্দের সময় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সম্পদ বরাদ্দের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মানবসম্পদ ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ উন্নয়নে বাধ্যতামূলক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
প্রস্তাবিত ব্যয়কে সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো ও সাধারণ সেবা খাত- এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সামাজিক অবকাঠামো খাতে মোট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৯ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। ভৌত অবকাঠামো খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২১ দশমিক ১২ শতাংশ। সাধারণ সেবা খাতের জন্য ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সুদের হার বৃদ্ধির ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার উল্লেখযোগ্য অবমূল্যায়ন হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ প্রেক্ষাপটে সুদ পরিশোধে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: বাজেট ঘাটতি মেটাতে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিতে চায় সরকার
ঋণ পরিশোধের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী সংসদকে বলেন, বাজেট প্রণয়নে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ, খাদ্য নিরাপত্তা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, এলডিসি থেকে উত্তরণ, ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া সহজীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগ ও শিল্প সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আলী বলেন,‘বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম দিয়েছেন 'টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রাপথে।’
দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত '২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট নাগরিকরা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে'।
আরও পড়ুন: লুটপাটের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এই বাজেট: ফখরুল