বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির মামলাগুলোর তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না করলে দুদকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হাইকোর্টের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন আদেশ দেন।
এসময় এই ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা তিনটি মামলার আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন আবেদনও খারিজ করে দেন আদালত।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, প্রায় সাত বছর আগে করা বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে যথাযথ আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন দাখিলের পর উচ্চ আদালতে হলফনামাও দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতি জেনে নিন’
তিন মামলায় ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তা মোহম্মদ আলীর জামিন প্রশ্নে রুল খারিজ করে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৬টি মামলার মধ্যে ১২টি মামলার আসামি রাজধানীর শান্তিনগর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী।
২০১৯ সালের ৯ জুন মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে দুদক। এর মধ্যে তিন মামলায় তিনি জামিন চেয়েছেন। পল্টন থানার তিনটি মামলায় করা জামিন আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০ এপ্রিল তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন।
একই সঙ্গে তার মামলার তদন্ত ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। তার জামিন আবেদনের শুনানি ৬ মাস মুলতবি করা হয়। এ তিনটি মামলায় ১৭৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
সে অনুযায়ী ৮ নভেম্বর মোহাম্মদ আলীর তিনটি মামলার জামিন আবেদনের ওপর ফের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু এই তিন মামলাসহ বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৬টি মামলার একটিরও তদন্ত শেষ হয়নি। পরে বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে ৮ নভেম্বর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সে অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় দুই হাজার ৭৭ কোটি ৩৪ লাখ দুই হাজার ৯৯১ টাকা, যা সুদসহ দুই হাজার ৫৯০ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৩ টাকা আত্মসাতের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান করে মোট ৫৬টি মামলা করেছে। এসব মামলায় ৮২ জন ঋণ গ্রহীতা ছাড়াও বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফকরুল ইসলাম, ডিএমডি ফজলুস সোবহান, সাবেক ডিএমডি শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, জিএম এ মোনায়েম খান, জিএম মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীসহ ২৭ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।
বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা, প্রিন্সিপাল/প্রধান শাখা, দিলকুশা শাখা এবং শান্তিনগর শাখা-এই চারটি শাখার ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে গুলশান থানায় ২৩, মতিঝিল থানায় ১২ ও পল্টন থানায় ২১টিসহ মোট ৫৬টি মামলা করা হয়।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই, বলছে বিএবি
মামলায় বেসিক ব্যাংকের ২৭ জন কর্মকর্তা, ৮২ ব্যবসায়ী ও ১১ বেসরকারি সার্ভেয়ারসহ মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়।
এরমধ্যে মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মামলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন। তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো-আত্মসাৎ করা অর্থ সম্পূর্ণরূপে নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে।
মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের শনাক্ত করা ও তাদের জবানবন্দি নেয়া (১৬১ ধারায়) কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এছাড়া সাক্ষীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্ণিত মামলায় আলামত প্রচুর ও ব্যাংকের বিশাল পরিমাণ কাগজপত্র থেকে প্রকৃত সব আলামত শনাক্ত করা সময়সাধ্য। প্রকৃত আসামি শনাক্তের প্রক্রিয়াটিও এ মামলায় বেশ জটিল।
এছাড়া, মামলার প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের জন্য মালয়েশিয়ায় এমএলএআর করা হয়েছে। সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও আলামত এখনও পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারীরা সরাসরি আনতে পারবে রেমিটেন্স: বাংলাদেশ ব্যাংক