ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ইইউর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও যেন মানুষকে যুদ্ধের ভয়াবহতা সহ্য করতে না হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায় এবং বিশ্বজুড়ে মানবতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা যায় এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইইউর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসে দেশি-বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কমিউনিটির অংশগ্রহণে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪-এর অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
২৯ এপ্রিল ঐতিহ্যবাহী সের্কেল রয়্যাল গেলুয়া সেন্টারে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
আরও পড়ুন: পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ: আইএইএ প্রধানকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে এশিয়া ও এর বাইরেও দ্রুততম বর্ধনশীল একটি অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।
বেলজিয়ামকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, তিনি তার বেলজিয়ামে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য এসে দেশটির সমাজ, সংস্কৃতি এবং মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশ জ্ঞান, দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে ভবিষ্যতে বিস্তৃত অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে কাজ করছে। আগামী দিনে বেলজিয়াম এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, সংযোগ, সুনীল অর্থনীতি, বৃত্তাকার অর্থনীতিসহ নিরাপত্তার প্রচলিত এবং অপ্রচলিত ক্ষেত্রসমূহে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বেলজিয়াম সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী) রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল এ্যাকশন সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এশিয়া ও প্যাসিফিক) নিকলাস কাভার্নস্টর্ম ছিলেন।
আরও পড়ুন: দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে ইইউর আগ্রহের কথা জানিয়ে নিকলাস কাভার্নস্টর্ম বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, ন্যায়বিচার, সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে যা বিদ্যমান অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ককে আরও মজবুত করে চলেছে।
অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে বাংলাদেশ ও বেলজিয়াম ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। আগামী দিনে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নতুন রূপ পাবে।
অনুষ্ঠানে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্র, সরকার ও বন্ধুদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীরতম শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার উন্নয়ন যাত্রার গল্প তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ বিশ্বের ৩৩তম বৃহত্তম, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং এক্ষেত্রে বেলজিয়াম ও ইইউর সঙ্গে নিবিড় অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ককে পরিণত ও টেকসই হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতার বাইরেও জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা, সুনীল অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য শক্তি, সংযোগ (কানেক্টিভিটি), অভিবাসন এবং ট্যালেন্ট পার্টনারশিপসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ড. হাছান মাহমুদ, জেরোএন কুরম্যান, নিকলাস কাভার্নস্টর্ম ও মাহবুব হাসান সালেহ কেক কেটে অতিথিদের সঙ্গে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩তম বার্ষিকী উদযাপন করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী