সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের সঙ্গে দশ চুক্তি বাতিলের যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেছেন, ‘যে তালিকা একজন উপদেষ্টার ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন, সেটা সঠিক নয়। এই তালিকার অধিকাংশ চুক্তি বাস্তবে নেই। একটি চুক্তি আছে অনেক পুরোনো। আর কয়েকটি চুক্তি আছে, যেগুলো পর্যালোচনার মধ্যে আছে, ঠিক ওই নামে নেই।’
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দাবি করেছেন যে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে করা ১০টি চুক্তি ও প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে ‘বাতিল ও বিবেচনাধীন চুক্তি/প্রকল্পগুলোর’ একটি তালিকাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে একটা চুক্তিই বাতিল করেছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি জিআরএসই’র সঙ্গে টাগ বোট চুক্তি, এটা আমরা বাতিল করেছি। বিবেচনা করে দেখা গেছে যে এটি বাংলাদেশের জন্য খুব একটা লাভজনক নয়।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যখন কোনো চুক্তি সই হবে বা বাতিল হবে, তখন আমরা আপনাদের জানাব।
উপদেষ্টা জানান, ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম রেল সংযোগ প্রকল্প, অভয়পুর-আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ নামে কোনো প্রকল্প নেই। আশুগঞ্জ–আগরতলা করিডোর নামে নেই কিছু, যে নামে আছে তা হচ্ছে আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেন প্রকল্প, এটার একটা প্যাকেজ বাতিল হয়েছে। ফেনী নদী পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নামে কিছু নেই, যেটা আছে সেটা একটা সমঝোতা স্মারক আছে, সেটা বাতিল হয়নি।
কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন প্রকল্প বলে কিছু নেই উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন জানান, যেটা আছে সেটা একটা সমঝোতা স্মারক। এটি স্থগিত হয়নি। বন্দরের ব্যবহার সংক্রান্ত সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন চুক্তি নামেও কোনো চুক্তি নেই। যেটা আছে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য পরিবহণ, সেটা বাতিল হয়নি। ফারাক্কা বাঁধ সংক্রান্ত প্রকল্পে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাব, এরকম কিছু নেই। সিলেট-শিলচর সংযোগ প্রকল্প নামে কোনো প্রকল্প নেই। পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ চুক্তি, এরকম কোনো চুক্তি হয়নি।
উপদেষ্টা জানান, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল হয়নি, প্রক্রিয়া চলছে। আদানি বিদ্যুৎ নিয়ে যেটা বলা হয়েছে সেটা মোটামুটি ঠিক আছে। এটা পুনর্বিবেচনার জন্য আলোচনা চলছে। গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে। এটা নবায়নের জন্য আলোচনা হবে, যোগাযোগ চলছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। খুব যে অগ্রগতি, তা নয়।
এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে ঢাকার অনুরোধের আপডেট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে কোনো আপডেট নেই। আপডেট হলে আমরা জানাব।’
ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ন্যায্য ও পূর্ণাঙ্গ বিচার প্রক্রিয়া প্রত্যাশা করে। ‘আমরা আশা করি, তারা (ভারতীয় কর্তৃপক্ষ) তা নিশ্চিত করবে।’
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক চায় এবং পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) সফরকে স্বাগত জানায়।
তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বার্থে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে চাই এবং সে দিকেই এগোচ্ছি।