পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে ভারতের নয়াদিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাতে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তিনি বলেন, ‘আমরা আলাদা সফর নিয়ে কাজ করছি। বর্তমানের সফর একটি বিশেষ উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক সফর। আমরা পরে সময়সূচি নির্ধারণ করব।’
শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথমে ৮ জুন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও এখন ৯ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মূল শপথ অনুষ্ঠান হবে ৯ জুন সন্ধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকালে নয়াদিল্লি পৌঁছাবেন। তিনি মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।'
এ অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেবেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালসহ বিশ্ব নেতারা। এই অনুষ্ঠানে ৮ হাজারেরও বেশি উচ্চ পদস্থ ব্যক্তির উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদিসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে মত বিনিময় করতে পারেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে জয় পাওয়ায় মোদিকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
এছাড়াও দ্বিপক্ষীয় সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘পারস্পরিক সহযোগিতার কিছু ক্ষেত্রে কিছু ঘোষণাও আসতে পারে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করব।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন সরকার এসেছে এবং ভারতে নতুন সরকার গঠিত হবে। সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং এক্ষেত্রে কিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলে আশা করছি আমরা।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম ৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়টি ইউএনবিকে নিশ্চিত করেন। আগামী ১০ জুন তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ৫৪৩ সদস্যের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩টি আসনে জয়ী হয়। এরপর আগামী ৯ জুন তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন মোদি।
এর আগে মোদি তার সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানালে তা গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
নির্বাচনে জয়লাভ করায় উষ্ণ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদি।
বিদেশি নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম মোদিকে অভিনন্দন জানান।
মোদি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। গত দশ বছরে নজীরহীন মাত্রায় বেড়েছে।
এক্স-এর মাধ্যমে শেয়ার করা এক বার্তায় মোদি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জনকেন্দ্রিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে তিনি একসঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এর আগে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) নিরঙ্কুশ বিজয়ে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: মোদির এনডিএ জোটকে ঢাকার অভিনন্দন, দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আশাবাদী
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতা হিসেবে আপনি ভারতের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করছেন।’
এনডিএর বিজয়ে শেখ হাসিনার কাছ থেকে টেলিফোনে অভিনন্দন পেয়েছেন মোদি বলে জানিয়েছে ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো।
দুই নেতা 'বিকশিত ভারত-২০৪৭' ও 'স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১' অর্জনের লক্ষ্যে নতুন ম্যান্ডেটের আওতায় ঐতিহাসিক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও গভীর করতে একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
গত দশকে দুই দেশের জনগণের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য উন্নতির কথা স্বীকার করেন দুই নেতা। অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, জ্বালানি নিরাপত্তা, ডিজিটাল সংযোগসহ যোগাযোগ এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে রূপান্তরমুখী সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রত্যাশা করেন।
জয়লাভের পর বুধবার রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন।
আরও পড়ুন: ২১-২২ জুন নয়া দিল্লি ও ৯-১২ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী