মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও গবেষক অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে কোনো একটি এলাকার মশায় ডেঙ্গু ভইরাসের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এই গবেষক আরও বলেন, বাকৃবি ও এর আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় এক হাজার এডিস মশার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত এডিস মশা থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত নির্যাসে ডেঙ্গু ভাইরাসের এন্টিজেন ব্যবহারের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়। ‘ল্যাটারাল ফ্লো ক্রোমাটোগ্রাফিক ইমিউনো অ্যাসে’ পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত সময়ে একটি অথবা একসঙ্গে অনেকগুলো এডিস মশার ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এক ঘণ্টা সময়ে ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো মশা নিয়ন্ত্রণ। মশা নিয়ন্ত্রণ একটি বৈজ্ঞানিক বিষয়।
তবে মশা নিয়ন্ত্রণের আগে মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে অধ্যাপক সহিদুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, ‘ল্যাটারাল ফ্লো ক্রোমাটোগ্রাফিক ইমিউনো অ্যাসে’ পদ্ধতির মাধ্যমে কোন একটি এলাকার এডিস মশায় ডেঙ্গু ভাইরাস আছে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত মশার সংখ্যা নজরদারির পাশাপাশি ডেঙ্গু পরিস্থিতির পূর্বাভাস জেনে সংক্রমনের ঝুঁকিও কমানো সম্ভব। এছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপও নেওয়া যাবে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে যেমন মশার প্রজননের হার বেড়েছে তেমনি জনসংখ্যা ও বাসস্থান বাড়ার কারণে এডিস মশার প্রজননের স্থানও বৃদ্ধি পেয়েছে।
একসময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস ক্রমান্বয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব মশা থেকে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক বলেন, সাধারণত ডেঙ্গু জীবাণুবাহী স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তবে প্রকৃতিতে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় এডিস মশাতে ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবানু থাকতে পারে। আক্রান্ত পুরুষ মশার সঙ্গে সুস্থ্য স্ত্রী মশার প্রজননে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের মশায় ওই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। তাই ডেঙ্গুর সংক্রমণ হার কমাতে পুরুষ ও স্ত্রী, ছোট ও বড় সকল মশায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
জনস্বাস্থ্যরক্ষায় এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউএনবিকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে এসিড মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।