প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবিত ও বিকাশে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন,‘আমি সবসময় গবেষণার উপর জোর দিই। কারণটি হলো গবেষণা ছাড়া কোনও কিছুর সমৃদ্ধি সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৩ উপলক্ষে সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ভাষা গবেষণার জন্য ফেলোশিপ দেয়ার পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন,‘আমি মনে করি এই ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব আছে পৃথিবীর সব ভাষা সংরক্ষণ করা, এগুলো নিয়ে গবেষণা করা এবং ভাষার ইতিহাস জানা। আমি মনে করি এটি করা যেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রয়োজনে ভাষা গবেষকদের ফেলোশিপ দেয়ার জন্য তিনি তহবিলের ব্যবস্থা করবেন।
তিনি আরও বলেন, গবেষণার সুবাদে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ‘এখন বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপকভাবে গবেষণার প্রয়োজন।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বাংলাদেশের দুই কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে ফেলোশিপ ও উপবৃত্তি এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান করছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কোনো টুইটার অ্যাকাউন্ট নেই
তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে সাক্ষরতার হার মাত্র ৪৫ শতাংশ থেকে ৬৫ দশমিক পাঁচ শতাংশে উন্নীত করেছিল এবং সেই সময়ে এই অর্জনের জন্য ইউনেস্কোর কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছিল। তারপর তার সরকার উচ্চ শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদানের জন্য পুরস্কারের অর্থ দিয়ে একটি তহবিল গঠন করে।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা এখন সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক দুই শতাংশে উন্নীত করেছি। সুতরাং, আমরা (শিক্ষার ক্ষেত্রে) অগ্রসর হচ্ছি।’
শেখ হাসিনা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শেখ হাসিনা চার প্রাপকের হাতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক তুলে দেন।
হাবিবুর রহমান এবং রঞ্জিত সিংহকে জাতীয় পদক প্রদান করা হয় এবং মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহেন্দ্র কুমার মিত্র এবং মাতৃভাষা প্রেমীদের ওয়ার্ল্ড সোসাইটি, ভ্যাঙ্কুভার, কানাডাকে আন্তর্জাতিক পদক প্রদান করা হয়।
মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভারস অব ওয়ার্ল্ড সোসাইটির সভাপতির পক্ষে পদক গ্রহণ করেন মো. আমিনুল ইসলামের।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) এবং বাংলাদেশে ইউনেস্কোর অফিস প্রধান ও প্রতিনিধি সুসান মারি ভাইজ।
আরও পড়ুন: মিরপুর-কালশী ফ্লাইওভার রবিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
'বহুভাষিক বিশ্বে বহুভাষিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা' বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. পবিত্র সরকার।
স্বাগত বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সুলেমান খান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. হাকিম আরিফ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’ শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, জাপান, চীন, রাশিয়া ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের শিশুরা প্রধানমন্ত্রীকে তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় শুভেচ্ছা জানিয়েছে।