ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য সরকার কিছু করছে না। তার বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না। যে মামলা হয়েছে, সেটা শ্রমিকরা করেছিল, তারপর শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছে। আমি কেবল বলব, দেশ আমাদের সবার। নির্বাহী, আইনসভা কিংবা বিচার বিভাগ সব বিষয়ে দেশের অর্জনই দেশের মানুষের।’
আনিসুল হক বলেন, ‘অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে- তার (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আরও বলা হচ্ছে আমরা তাকে হয়রানির জন্য এটা করছি।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দুটো কথাই- সরকার ড. ইউনূসকে হয়রানির করার জন্য কিছু করছে না, সরকার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছে না। যে মামলা হয়েছে, সেটা শ্রমিকরা করেছিল। এরপর শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যে অধিদপ্তর আছে, সেই ডিপার্টমেন্ট তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলাকে ঘিরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করতে দেশে-বিদেশে যে চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটাকে পরাজিত করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না, অপরাধ করলে সবাইকে আইনের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা বহুদিন বিচারহীনতায় ভুগেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে আর কেউ বিচারহীনতার শিকার হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতির শিকার আর কেউ হয়নি। যে কারণে আমরা খুব ভালোভাবে বুঝি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ দেশ থেকে দূর হওয়া দরকার।’
আনিসুল হক আরও বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলেই কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং শ্রমিকরা তাদের অধিকার পাচ্ছেন। বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করতে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটাকে আমরা ডিফিট (পরাজিত) করব।’
‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এবং সর্বপরি বাংলাদেশের মর্যাদা ও গণতন্ত্র, ন্যায়বিচারের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটা মামলাকে কেন্দ্র করে কিছু অপপ্রচার হচ্ছে। আপনারা জানেন, আমি আইনমন্ত্রী হিসেবে গেল ১০ বছর একটি বিষয় সবসময় মেনে চলেছি, সেটা হচ্ছে কোনো বিচারাধীন মামলা নিয়ে আমি কোনো কথা বলি না। কিন্তু যেখানে সরকার, বিচার বিভাগ ও দেশের ব্যাপার জড়িত, সেখানে যখন দেশের মর্যাদা হেয় করার প্রচেষ্টা চলে, তখন আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না।’
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে যে মামলা করা হয়েছিল, তার কার্যাবলী ও পরিপ্রেক্ষিত ব্যাখ্যা করার জন্যই এই সংবাদ সম্মেলন করা হয় বলে জানান আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী, যেকোনো কোম্পানি নিয়ে অভিযোগ থাকলে, যদি মনে হয় তারা আইন লঙ্ঘন করছে, তবে একজন পরিদর্শক সেটা পরিদর্শন করতে পারে। এক্ষেত্রে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শ্রম বিভাগের পরিদর্শক শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী প্রথমে গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শন করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে তিনি কিছু আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে বলে জানতে পেয়েছেন। পরে ১ মার্চ গ্রামীণ টেলিকমকে চিঠি দেন। এসব লঙ্ঘনের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য কী এবং এসব লঙ্ঘন যাতে তারা শুধরে নেন, সেটা বলেন।’
গ্রামীণ টেলিকমের জবাব প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, তাদের যে জবাব ছিল, তাতে শ্রম অধিদপ্তর সন্তুষ্ট না হয়ে ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট আবারও গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শন করে। সেখানেও একই আইনের ব্যত্যয় দেখা দেওয়ার পর ১৯ আগস্ট একটি চিঠি দিয়ে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে বলে শুধরে নিতে বলেন। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমের জবাব যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত হয়নি। এমন অবস্থায় ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে ৯ সেপ্টেম্বর মামলা করা হয়েছে।