বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশি পণ্যে আরোপিত মার্কিন শুল্ক আরও হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এসব বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের ওপর শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে ব্রেন্ডেন লিঞ্চকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সেইসঙ্গে ইউনূস এ পদক্ষেপকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে তিন দিনের সফরে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসেছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা ও সয়াবিনসহ কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর আগ্রহও প্রকাশ করেছে।
এ ছাড়া জ্বালানি খাতে সহযোগিতা জোরদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আমদানি, বেসামরিক বিমান কেনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আবুল কালাম আজাদ।
এদিকে, দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততায় ধারাবাহিক অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ করে চলমান আলোচনার খসড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের স্বার্থের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। তাই প্রক্রিয়াটি আরও সহজ ও আশাব্যঞ্জক হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ১১ দফা 'বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান' বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক শ্রমমান ও ন্যায্য অনুশীলন রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ এবং স্বল্পসুদে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি প্রত্যাশা করছে।
সেইসঙ্গে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে বলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত মনোনীত হলেন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন
বৈঠকে ব্রেন্ডান লিঞ্চ বাংলাদেশের গঠনমূলক মনোভাবের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অংশীদারিত্ব আরও সুদৃঢ় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি একতরফাভাবে কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর ফলে আলোচনার প্রক্রিয়া মসৃণ হয় এবং ইতিবাচক ফল এসেছে।
শুল্ক চুক্তি ও আমদানি প্রতিশ্রুতিগুলো সময়মতো বাস্তবায়নের গুরুত্বও তুলে ধরেন এই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টাশেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, ইউএসটিআরের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক এমিলি অ্যাশবি, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মুরশেদ, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।