কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন নারী ও দুই শিশুসহ ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন বলেন, নিহত ১১ জনের মধ্যে সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং পরে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে।
তিনি জানান, আগুনে ক্যাম্পের ৯ হাজার ৩০০ পরিবার, ১৩৬টি শিক্ষা কেন্দ্র, একটি পুলিশি ব্যারাক পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মহসিন জানান, আগুনের ঘটনা তদন্তের জন্য শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু
এর আগে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা জানান, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পার্শ্ববর্তী অন্য ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার আগেই আগুন একে একে ৮ নম্বর ওয়েস্ট ৮, ১০ সর্বশেষ ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে যায়।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার, উখিয়া, রামু ও টেকনাফ থেকে ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এসময় সেনাবাহিনী, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য, রেডক্রিসেন্টের টিম ও স্থানীয় গ্রামবাসী যোগ দেয়। রাত ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাগোয়া বাংলাদেশিদের দুই শতাধিক বাড়ি ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমদ নিজাম উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এখন অনেকটা গৃহহীন।
সকালে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানিয়েছিলেন, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত দুই শিশুসহ সাতজন রোহিঙ্গা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। মৃতদেহগুলো একদম পুড়ে গেছে।
উখিয়ার বালুখালী ৮নং এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. শিহাব কায়ছার জানান, আগুনে বালুখালীতে অবস্থানরত ৪নং এপিবিএনের ব্যারাক আংশিক পুড়ে গেছে। তবে অস্ত্র ও মূল্যবান আসবাবপত্র নিরাপদে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আগুনে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর ছাড়াও বেশকিছু এনজিও অফিস, স্কুল-মাদরাসা পুড়ে গেছে।
ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) কর্মকর্তা সৈয়দ মো. তাফহিম বলেন, ‘অগ্নিকানণ্ডে এখনই সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির উপর বিস্তারিত তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা দেখতে পেয়েছি এর তীব্রতা অনেক। হতাহতের এবং ক্ষয়ক্ষতির খবর যাচাই করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের করিম জুট মিলে আগুন
তিনি জানান, ক্যাম্প ভিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তৈরি একটি শিটের হিসাব অনুসারে বালুখালির ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ৬ হাজার ২৫০ আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন, ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ৬ হাজার ৬১৩টি আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন, ক্যাম্প ৯-এ বাড়ি ৭ হাজার ২০০টি আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন ও ক্যাম্প ১০-এ বাড়ি ৬ হাজার ৩২০টি আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন। তিনি উল্লেখ করেন অগ্নিকাণ্ডে এই চারটি ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।
উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানান, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনও তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও নানা তথ্য দিয়ে আসছেন। এমনকি রোহিঙ্গারাই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারপ করে আসছেন। তদন্তে আসল ঘটনার তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এদিকে, দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়স্থল হারিয়ে এক কাপড়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় গ্রামবাসীর বসতভিটাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।