রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের বন্ধ সীমান্ত নীতি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি থমাস অ্যান্ড্রুস।
বৃহস্পতিবার(২৩ মে) বাংলাদেশ সরকারের কাছে এই প্রত্যাহার আবেদন জানান তিনি।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের(বাংলাদেশের) মানবিক সমর্থন আবারও প্রদর্শনের আবেদন করেছেন, যদিও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে চাপে রয়েছে।
জাতিসংঘের এই মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘আবারও বাংলাদেশের উদারতা তাদের একমাত্র আশা হতে পারে, কারণ রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে সীমান্তে ভিড়ছে।’
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর: অগ্রাধিকার পাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ ও সমর্থন ছাড়া এই সংকটের চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই বলেও সতর্ক করেন জাতিসংঘের এই বিশেষ প্রতিনিধি।
জেনেভা থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রেশনের ঘাটতি, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সহিংসতা বৃদ্ধি এবং রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে জোরপূর্বক সম্পৃক্ত করার কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।
সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা পরিবারগুলোকে উদ্ধার ও সহায়তা করতে এবং আশ্রয় শিবিরের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তার জন্য তহবিলের একটি জরুরি যোগান দিতে সব দেশকে আহ্বান জানান তিনি।
এন্ড্রুজ বলেন,‘এই ভয়ংকর অবস্থায় দেশগুলোর এগিয়ে আসা বা পিছিয়ে যাওয়াই আক্ষরিক অর্থে অগণিত রোহিঙ্গার জীবন বাঁচানো অথবা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের রক্তপাতের অশুভ লক্ষণের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাড়া দিতে ব্যর্থ হলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাবে।
আরও পড়ুন: সংকট গভীর হওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যখন একটি সাম্প্রদায়িক অপ্রাকৃতিক বিপর্যয় বর্তমান এই সময়ে উদ্ভূত হয়েছে, তখন বিশ্ব আবারও তাদের বিপদের সময়ে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে যখন।’
অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘সামরিক বাহিনী ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে উত্তর রাখাইন থেকে তথ্য পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠেছে। সেখানে হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং ব্যাপক অগ্নিসংযোগের উদ্বেগজনক ও বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া যাচ্ছে।’
স্যাটেলাইটের ছবিগুলো বুথিডাং শহরের বড় অংশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা প্রকাশ করে, যেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, ‘উত্তর রাখাইন রাজ্য থেকে ইতোমধ্যেই যে তথ্য উঠে এসেছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাৎক্ষণিক জরুরি প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার চেয়ে বেশি।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, আরাকান আর্মি এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোসহ রাখাইনে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয়। আমি সবাইকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে এবংধর্ম বা জাতি নির্বিশেষে নিরীহ বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে জরুরি মানবিক সহায়তা সরবরাহের ব্যবস্থা অবিলম্বে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং সব পক্ষকে রাখাইনে সাহায্যের জোরালো নীতিকে সমর্থন করতে হবে।’
‘যদিও তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত সত্য উদঘাটন করতে হবে এবং দায়ীদের সম্পূর্ণরূপে জবাবদিহির আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তবে রাখাইন রাজ্যে বিষাক্ত পরিস্থিতি তৈরিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট। প্রচারণা থেকে শুরু করে জাতিগত উত্তেজনা উসকে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়ও যুবক রোহিঙ্গা পুরুষদের সামরিক জান্তা বাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ২০১৭ সালে সীমান্ত খুলে দিয়ে গণহত্যার আক্রমণের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গার জীবন বাঁচিয়েছিল বলে স্মরণ করিয়ে দেন অ্যান্ড্রুজ।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমার আরও সচেষ্ট হবে বলে আশ্বাস বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের