স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার তিনি কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারার অধীনে প্রস্তাবটি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি পাস করার আগে ট্রেজারি এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেবেন।
প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় অধ্যায়। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ‘উন্নয়ন বিস্ময়’।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান,৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চ গণহত্যা, ২৬শে মার্চ ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা এসেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় আসে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে ডি-লিট ডিগ্রি দেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের মধ্যে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়, বেআইনিভাবে দেশের ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সামরিক ডিক্রির মাধ্যমে সংবিধান ভেঙে দেয়া হয়েছিল।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করি। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা। দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, ৯ লাখ গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মাণ, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্য এসেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জনগণের বাহিনী হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রেমিটেন্স এবং রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে ৪১তম অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্ণফুলী টানেল এবং নিজস্ব-অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এবং মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের সাফল্যের ক্ষেত্রে এক অনন্য মাইলফলক যোগ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি হল জাতীয় সংসদ। সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে জনগণের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই হবে সবার অঙ্গিকার।
আরও পড়ুন: সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত স্বাধীনতা বৃথা যেতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী