ঢাকা, ১০ আগস্ট (ইউএনবি)- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সংস্কার এজেন্ডা না জেনে তাদের নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে এখনই কথা বলা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেয়াদ নিয়ে বারবার কথা বলে এখন অস্থির হওয়ার কিছু নেই। কী ধরনের সংস্কার চান তা না জেনে মেয়াদ নিয়ে কথা বলতে পারব না। আপনি যদি সংস্কার না চান, সেটা ভিন্ন কথা। ’
শুক্রবার (৯ আগস্ট) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রিজওয়ানা এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম অনানুষ্ঠানিক সভার ফলাফল নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।
যমুনা এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অস্থায়ী বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, 'এই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যতটুকু সময় দরকার আমরা শুধু ততটুকুই নেব এবং চূড়ান্তভাবে আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাব।’
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জনগণ প্রায়ই সব সেক্টরে সংস্কারের কথা বলে, 'এভাবে চলতে পারে না' এবং 'সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে।’
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একা সংস্কার করতে পারবে না এবং গণমাধ্যম ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সমাজের সবার সঙ্গে কথা বলবে।
রিজওয়ানা বলেন, 'সংস্কার এজেন্ডা ঠিক করে আমরা আলোচনায় যাব।’
কীভাবে যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, 'আজকে সমস্যার সমাধান হবে না, তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব এটি সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায় কিছু কিছু জায়গায় হামলার শিকার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার স্থানীয় জনগণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে তাদের জন্য একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরির চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন ও সংঘর্ষে প্রাণ হারানো সকল শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
যমুনা এখন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অস্থায়ী বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সভায় গৃহীত অন্যান্য সিদ্ধান্ত তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, যত দ্রুত সম্ভব উচ্চ আদালতের কার্যক্রম পুনরায় সচল করার ব্যবস্থা গ্রহণ, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক আন্দোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে এবং অতীতে এ ধরনের আরও অনেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকার এসব হয়রানি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, আইসিটি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইন- এই তিনটি আইনে হয়রানিমূলক মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, যদিও আইসিটি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে, তবুও অনেকে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, অনেকে কারাগারে আছেন বা বাতিল দুটি আইনের অধীনে দায়ের করা অনেক মামলার কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘সুতরাং, আমরা আগামী দিনগুলোতে আইনগুলোর পরিবর্তন আনার বিষয়ে আলোচনা করব, যাতে এগুলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা না যায় বা ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহৃত না হয়।’
সব মন্ত্রণালয় পরিচালনায় উপদেষ্টাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সেটি পরে চূড়ান্ত করবে সরকার।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানুষের জীবন ও জীবিকা, বাজার ও আর্থিক খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে, বিশেষ করে এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’