বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বৈঠক শেষে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অমিত হাসান রক্তিম বলেন, প্রশাসনের সাথে বৈঠকে আমাদের তিন দফা দাবি পুনরায় তুলে ধরেছি। সেখানে দুটি বিষয়ে আশ্বস্ত হলেও একটি বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। গত মঙ্গলবার রাতের হামলার ঘটনায় রুপাতলী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপনসহ কয়েকজনের নাম বলেছি। যাদের নাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা মামলায় এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা এবং মামলায় হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও শিক্ষার্থীদের মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে শিক্ষার্থীরা দাবি করলেও বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সুরাহা হয়নি।
আরও পড়ুন: ববি শিক্ষার্থী ও পরিবহন শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি সড়ক অবরোধ
তবে, আশ্বাস নয় মূল হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
হামলায় আহত শিক্ষার্থী আলিম সালেহী বলেন, ‘আমরা আজ সড়ক অবরোধ তুলে (স্থগিত) নিলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। এছাড়া আগামীকাল ২১ ফেব্রুয়ারি হওয়ায় সড়ক অবরোধ কর্মসুচি থাকছে না।’
২১ ফেব্রুয়ারির পরে সড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি থাকবে কিনা তা পরবর্তীতে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
ববি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহামুদুল হাসান তমাল বলেন, প্রশাসন অনেকটাই গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছে সেজন্য আমাদের মৌলিক অধিকারের জায়গা থেকে আন্দোলন করতে হচ্ছে। আর সড়ক অবরোধের কারণে জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি, তবে এছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।’
আরও পড়ুন: ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: বিচারের দাবিতে আন্দোলন আপাতত স্থগিত
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন অব্যাহত
বৈঠকে উপস্থিত থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ পুলিশ কমিশনার মোকতার হোসেন জানান, ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজ্ঞাতদের আসামি করে যে মামলা করেছে তা তদন্ত করে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে হামলার সাথে জড়িত যাদের নামই আসবে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হবে।
এ বিষয়ে ববি উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তিন দফাসহ যে দাবিগুলো করেছে তা মানা হয়েছে এবং হচ্ছে। আমি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। তারা বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছে বলে মনে করছি। আশা করি তারা ধৈর্য্য ধারণ করবে এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।’
আরও পড়ুন: হামলার প্রতিবাদে ববি শিক্ষার্থীদের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ
আশ্বাসের পর অবরোধ তুলে নিল ববি’র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে রুপাতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়। এরপর রাতে রুপাতলী হাউজিং এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। এতে ১১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার প্রতিবাদ ও মামলা দায়েরসহ হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এর ১০ ঘণ্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা দায়েরের পর সেই মামলা প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় শুক্রবার সড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পুনরায় ১৩ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় তারা।