অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অপচয় ও দুর্নীতি প্রতিরোধে অটোমেটেড সরকারি আর্থিক সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, আর্থিক সেবার বিভিন্ন প্লাটফর্ম একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হলে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সাধারণ মানুষ সেবা প্রদানকারীর কাছে না গিয়ে যত বেশি সেবা অটোমেটেড পদ্ধতি পাবেন, ততই দুর্নীতি কমবে এবং নির্বিঘ্নে সেবা পাবেন।
সোমবার প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থ বিভাগের বিভিন্ন সেবা দ্রুততার সঙ্গে, সহজে ও সাশ্রয়ীভাবে প্রদানের জন্য তৈরি করা বিভিন্ন অন-লাইন প্ল্যটফর্ম উদ্বোধন করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, উদ্ভাবিত বিভিন্ন অটোমেটেড সেবা প্লাটফর্মের কার্যকারিতা সমুন্নত রাখার জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টি করে তাদের মাধ্যমে নিয়মিত নবায়ন করতে হবে।
উদ্বোধন করা সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে- নবরূপায়িত আইবাস++ ওয়েবসাইট; এ-চালান ওয়েবসাইট; পেনশনারদের জন্য লাইফ ভেরিফিকেশন অ্যাপ; পেপারলেস অনলাইন লাস্ট পেমেন্ট সার্টিফিকেট (এলপিসি); সরকারি কর্মচারীদের অনলাইনে ছুটির আবেদন দাখিল, ছুটি মঞ্জুর ও হিসাবায়নের জন্য অনলাইন ছুটি ব্যবস্থাপনা; অনলাইনভিত্তিক সরকারি আবাসন না-দাবি সনদপত্র এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিল দাখিল ও চাকরি সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য অনলাইনে প্রাপ্তির সুবিধার্থে ‘আইবাস সেইফ’ মোবাইল অ্যাপ।
আরও পড়ুন: চলমান ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচির জন্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের সহায়তা চায় সরকার: অর্থ উপদেষ্টা
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মো. নূরুল ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ বিভাগের স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইনানসিয়াল ম্যানেজমেন্ট টু এনাবেল সার্ভিস ডেলিভারি (এসপিএফএমএস) কর্মসূচির আওতায় প্রস্তুত করা বিভিন্ন অনলাইন সেবার ওপর উপস্থাপনা করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্তি সচিব ও এসপিএফএমএস কর্মসূচির জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
মো. নূরুল ইসলাম বলেন, কার্যকর পাবলিক ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়নে মানসম্মত হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা পদ্ধতির অবদান অনস্বীকার্য এবং এটি সরকারি অর্থের দক্ষ ও সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংসদ অনুমোদিত তহবিল অভীষ্ট লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয়েছে কি না এবং আর্থিক ক্ষমতা ও পদ্ধতি মেনে ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে কি না- তা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সিএজির অডিট রিপোর্ট মূল তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করে, যা সরকারি হিসাব কমিটিকে কার্যকর ভূমিকা পালনে সহায়তা করে।
মো. আবদুর রহমান খান বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে সেবা স্বচ্ছতার সঙ্গে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এনবিআরের বিভিন্ন কার্যক্রম অটোমশেন করা হচ্ছে। এনবিআরে এর অটোমেশনের কজা আইবাস++ এর সঙ্গে সমন্বয় করে করা হচ্ছে; যাতে সেবার সুযোগ সম্প্রসারিত হয় এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।
মো: শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, আমাদেরকে ইনক্লুসিভ আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে যাতে অর্থনীতিতে সেকেন্ড জেনারেশন রিফর্ম করে টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, সরকারি অর্থ ব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে একটি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক ইন্টিগ্রেটেড ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম এবং বাংলাদেশে এ সিস্টেম হলো আইবাস++, যা সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনাকে আরও কার্যকর এবং স্বচ্ছ করতে সহায়তা করছে।
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তার উপস্থাপনায় বলেন, অর্থ বিভাগের বিভিন্ন অনলাইন সেবা সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। সেবাগ্রহীতাদের এ কার্যক্রমের সর্বাধিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একটি সর্বাধুনিক ওয়েবসাইট নির্মাণ করা হয়েছে। ‘এ চালান’, ‘ইএফটি’, জি-টু-পি, পেনশন, ব্যক্তিগত লেজার অ্যাকাউন্ট, ব্যয় সংশ্লিষ্ট তথ্য রিয়েল টাইমে এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখা যাবে।
তিনি তার উপস্থাপনায় সরকারের অর্থ সাশ্রয় ও দ্রুততার সঙ্গে সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা ‘আইবাস সেইফ’ মোবাইল অ্যাপ, সনদের জন্য আবেদন ও সনদ প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি অনলাইনভিত্তিক করা এবং সরকারি রিফান্ড সিস্টেম উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও অর্থ পাচার রোধে আইএমএফের কারিগরি সহায়তা চায় বাংলাদেশ: অর্থ উপদেষ্টা