সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের (সিসিপিপি) ২২ বছরের প্রাথমিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কোম্পানি এইএস করপোরেশনের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে সফলভাবে পরিচালনার মেয়াদ শেষ করে। এরপর থেকে সরকার এই কেন্দ্র থেকে আর বিদ্যুৎ নেয়নি।
২০০১ সালে হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট সিসিপিপি এবং ২০০২ সালে মেঘনাঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট সিসিপিপি নামে দুটি বৃহৎ বেইজ-লোড বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলে এইএস করপোরেশন।
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) অনুযায়ী প্রথম প্রজন্মের দুটি স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে আসছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে হরিপুরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ছিল ১ টাকা ৫৬ পয়সা, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন।
২০১৪ সালের ২৪ জুন প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক নথিতে বিভিন্ন আইপিপিএসের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের তুলনা করে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড যখন বিপিডিবির কাছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করছিল ১৬ দশমিক ০৩ টাকায়, ১৯৯৯ সালে এনইপিসি বিক্রি করত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ২০ টাকা ২০ পয়সা, তখন হরিপুর প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করছিল মাত্র ১ দশমিক ৫৬ টাকা এবং মেঘনাঘাট প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করছিল ২ দশমিক ৩৩ টাকায়।
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা
বর্তমানে প্রতি ইউনিট গড় উৎপাদন ব্যয় ১০ টাকার বেশি। গত ১ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ৮ টাকা ৯৫ পয়সা নির্ধারণ করে।
কর্মকর্তারা জানান, গত বছর পর্যন্ত বিপিডিবি এই কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৩২ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনছিল, যা অন্য সব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সর্বনিম্ন।
কিন্তু ২০২৩ সালের নভেম্বরে পিপিএর মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় স্থগিত করে বিপিডিবি।
বিপিডিবির এমন পদক্ষেপ অনেককে বিস্মিত করেছে, কারণ সামিট গ্রুপের উচ্চ মূল্যের প্লান্ট এবং অন্যান্য প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ কেনা অব্যাহত রাখতে সরকার একতরফাভাবে সবচেয়ে সক্রিয়। কিন্তু সর্বনিম্ন খরচের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘আসলে বিপিডিবির সঙ্গে চুক্তি নবায়নে হরিপুর প্লান্টের পক্ষ থেকে জোরালো কোনো তাগিদ ছিল না। এ কারণে দেশ কম খরচে বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হবে।’
আরও পড়ুন: জাতীয় গ্রিডে ৬১৮ এমএমসিএফডি গ্যাস যোগ করতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা
তবে সরকার হরিপুর প্লান্টের মালিক-কোম্পানিকে এটি কিনে বিপিডিবি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার প্রস্তাব দিতে পারে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইএস করপোরেশন মালিকানায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনে হরিপুর ও মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। এখন দুটি প্ল্যান্টেরই মালিক মালয়েশিয়ার পেনডেকার এনার্জি লিমিটেড এবং তারাই পরিচালনা করছে।
২০০৩ সালে এইএস যুক্তরাজ্যের কোম্পানি সিডিসি গ্লোবলেকের কাছে প্লান্টটি বিক্রি করে। এরপর ২০০৭ সালে মালয়েশিয়াভিত্তিক পেন্ডেকার গ্রুপের কাছে আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিক্রি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে মাসে ৫০ থেকে ৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়।
আরেকটি সূত্র বলছে, ‘২০২২ সালের নভেম্বর থেকে কেন্দ্রটির অপারেটর বিপিডিবির কাছ থেকে কোনো বিল পাচ্ছে না, যার কারণে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।’
সূত্রটি আরও জানান, সামিট গ্রুপের মেঘনাঘাট প্লান্ট, ইউনিক গ্রুপের মেঘনাঘাট প্লান্ট এবং কয়লাভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাড়ে ৬ টাকা থেকে ৩০ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতা থাকায় বিপিডিবিও তার কার্যক্রম বাড়াতে আগ্রহী নয় উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: আগামী ২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ৮০৪ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ