সাংবাদিক অধরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে শুরু হওয়া মামলাগুলো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের জন্য কাজ করা ১৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা।
বুধবার (৩১ আগস্ট) একটি সম্মিলিত আবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনকে এই আহ্বান জানায় সংস্থাগুলো।
রাজারবাগ দরবার শরিফের কার্যকলাপের উপর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির সাংবাদিক অধরা ইয়াসমিনের ভিডিও প্রতিবেদনের তদন্তের পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ আনার পর এ আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে: আইনমন্ত্রী
রাজারবাগ দরবার শরিফের সদস্যরা ইয়াসমিনকে হয়রানি করার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলোর জোট। তারা অভিযোগ করেছে, চলতি বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে তাকে অননুমোদিত নজরদারি, হুমকি ও ভয় দেখানো হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলো তার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক বলে মনে করা হয়।
দ্রুত এসব হুমকির তদন্ত করার উপর জোর দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। পাশাপাশি দোষীদের জবাবদিহির আওতায় এনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং মানসিক শান্তি নিশ্চিত করার উপরও জোর দেয় তারা।
ইয়াসমিনের প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তার সহকর্মী আকরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করার জন্যও জোটটি বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন পেলেও কারামুক্তি পাচ্ছেন না ইভ্যালির রাসেল
কাঞ্চন দাবি করেন, রাজারবাগ দরবার শরিফের নেতা শাকেরুল কবির প্রতারণা করে স্থানীয়দের সম্পত্তি অর্জন করেছেন। জোটটি সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এই আইনি প্রতিক্রিয়াকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন বিজেআইএম, (বিভিন্ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের খবর প্রকাশ করে এমন বাংলাদেশি সাংবাদিকদের একটি প্ল্যাটফর্ম) চিঠিটিকে সমর্থন করেছে এবং কর্তৃপক্ষকে অধরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত না করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিজেআইএম-এর মুখপাত্র রেদওয়ান আহমেদ বলেছেন, ‘একটি সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক, মতপ্রকাশ ও সত্য প্রকাশের অনুমতি দেয়।’ ‘আমরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে সাংবাদিকদের হয়রানি বা ভয় দেখানোর জন্য ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা ব্যবহার বন্ধ করার এবং অধরা ইয়াসমিনের সাংবাদিকতার কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্যে, নির্ভয়ে মুক্ত সাংবাদিকতার উপর জোর দেয় গ্রুপটি। ডিএসএ বাতিলের কথা উল্লেখ করে নতুন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মত প্রকাশের হুমকির বিরুদ্ধে সতর্ক করে। অধিকারের প্রতি সম্মানজনক আইন গঠনের জন্য স্টেকহোল্ডারদের জড়িত করার আহ্বান জানায় এ জোট। একই সঙ্গে, মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার এবং ডিএসএ -এর অধীনে বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বদলে হচ্ছে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’
চিঠিতে সই করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আর্টিকেল ১৯ সাউথ এশিয়া, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইজে), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট, ফোরাম ফর ফ্রিডম অব এক্সপ্রেস বাংলাদেশ, ফ্রি প্রেস আনলিমিডেট, আইএফইএক্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস(এফআইডিএইচ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে), ইন্টারন্যাশনাল ওমেনস মিডিয়া ফাউন্ডেশন, পেন আমেরিকা, পেন বাংলাদেশ, পেন ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।