প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে এ কথা বলেন।
জাতিসংঘ মঙ্গলবার সর্বসম্মতিক্রমে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত প্রথম রেজুলেশনটি গ্রহণ করেছে। রেজুলেশনটির শিরোনাম হচ্ছে ‘কমিউনিটি-বেসড প্রাইমারি হেলথ কেয়াএ: আ পার্টিসিপেটরি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ অ্যাপ্রোচ টু ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ’। রেজুলেশনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, কমিউনিটি সম্পৃক্ততা এবং স্বাস্থ্যের সার্বজনীন প্রবেশাধিকার অর্জনে কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্লিনিকের অভিজ্ঞতা জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বিনিময় করে সেসব দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘তারা (জনগণ) যদি বারবার আমাদের ভোট না দিত এবং আমাকে সেবা করার সুযোগ না দিত, তাহলে আমি এখানে আসতাম না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কর্মসূচি গ্রহণ করে।
তিনি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১১ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পরও আ.লীগ জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এ সময় এ ধরনের চার হাজার ক্লিনিক থেকে সেবা প্রদানের কার্যক্রম চালু করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরিপে দেখা গেছে যে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সফলতা অর্জিত হয়েছে এবং এখন গ্রামের মানুষ বিশেষ করে গর্ভবতী নারীসহ অন্যান্য নারীরা সেখান থেকে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা বিস্তৃত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এগুলো শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং নারীরাও তাদের মাতৃত্বকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ এখন সেখান থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছে এবং এসব সুবিধা গ্রামীণ নারীসহ প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিককে কেন্দ্র করে গ্রামাঞ্চলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
শেখ হাসিনা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয় এই ভয়ে যে সুবিধাভোগীরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে পারে।
তিনি প্রশ্ন করেন,‘আমার এটা খুব খারাপ লেগেছে যে আমরা যেসব ক্লিনিক স্থাপন করেছিলাম সেখানে তো শুধু আওয়ামী লীগের লোকেরা চিকিৎসা পেতো না, সাধারণ মানুষও সেখানে সেবা পেতো। এসব এলাকায় অন্যান্য দলের সমর্থকরাও ছিলেন। তাহলে সেগুলো (কমিউনিটি ক্লিনিক) বন্ধ করা হলো কেন?’
তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পরও কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম যাতে কেউ বন্ধ করতে না পারে সেজন্য সরকার একটি ট্রাস্টও গঠন করেছে।’
বারবার হত্যার চেষ্টার পরও তিনি বেঁচে থাকায় তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘…এবং গ্রেনেড, বোমা ও বুলেটের মুখোমুখি হয়েও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে সক্ষম। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের প্রায় ৭০টি সদস্য দেশ এই রেজুলেশনের সহ-পৃষ্ঠপোষক এবং এটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল 'দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ' গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী জাতিসংঘের সহ-পৃষ্ঠপোষক ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।