সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে গুজব ও উসকানিমূলক কনটেন্ট ছড়ানো বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
এসব প্রচেষ্টা বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে এবং অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে সংগঠনটি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশি ও বিদেশি নানা উৎস থেকে যাচাইহীন ও উসকানিমূলক কনটেন্ট প্রচার হয়েছে। দেশের মধ্যে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে এটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
এর ফলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
মহিউদ্দিন বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সংবাদমাধ্যম এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসীসহ কিছু বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া তথ্য প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল উসকানি দেওয়া এবং নাগরিকদের মধ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া।
দেশের ডিজিটাল ও সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধনের এই সময়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এ ধরনের কনটেন্ট প্রচার বন্ধ করে জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: ১৬ বছরের কম বয়সিদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করল অস্ট্রেলিয়া
ভুল তথ্য প্রতিরোধে সুপারিশ
এসব সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিক পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি:
১. সচেতনতামূলক প্রচার
শিক্ষা ও প্রচার: স্কুল, কলেজ ও মিডিয়া সংস্থাগুলোর উচিত জনগণকে মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করতে শেখানো।
ডিজিটাল সাক্ষরতা কর্মসূচি: তথ্য যাচাই এবং উৎস ক্রস-চেক করতে লোকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
২. নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্র
সরকারি তথ্য সূত্র: গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সময়মতো ও সঠিক প্রচার নিশ্চিত করা।
ফ্যাক্ট চেকিং প্লাটফর্ম: ভুল তথ্য প্রতিরোধে স্বাধীন ও সরকার সমর্থিত সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা।
৩. দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা
বিশেষায়িত দল: ভুল তথ্য শনাক্ত ও প্রতিহত করার জন্য একক ইউনিট মোতায়েন করা।
হটলাইন ও রিপোর্টিং সিস্টেম: নাগরিকদের সন্দেহজনক কন্টেন্ট সহজে রিপোর্ট করার সুযোগ দেওয়া।
৪. মিডিয়ার দায়িত্বশীলতা
যাচাই করে সংবাদ প্রকাশ: গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোর ভালোভাবে তথ্য পর্যালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ নিশ্চিত করা।
সচেতনতামূলক প্রচার: নিয়মিত অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ভুল তথ্য চিহ্নিত করার পদ্ধতি প্রচার করা।
৫. সর্ব সাধারণের অংশগ্রহণ
সামাজিক দায়িত্ববোধ উদ্যোগ: গুজব মোকাবিলায় কমিউনিটি নেতাদের ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে যুক্ত করা।
পরিবারের সচেতনতা: পরিবারে আলোচনার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করে ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল অনলাইন আচরণে শিক্ষিত করা।
৬. প্রযুক্তিগত নজরদারি
এআই ও অ্যালগরিদম: ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা শনাক্ত করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
অ্যাপস ডেডিকেটেড: মিথ্যা তথ্য শনাক্ত এবং প্রতিরোধ করার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
৭. আইনগত সংস্কার
বর্ধিত আইনি কাঠামো: ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনগুলোকে আরও কার্যকর করতে নীতিমালা প্রবর্তন করা।
যৌথ প্রচেষ্টা
ভুল তথ্য মোকাবিলায় সরকার, বিটিআরসি ও এনটিএমসির মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত পদক্ষেপেরে ওপর জোর দিয়েছে সংগঠনটি।
তারা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন ছবিটি এআই দিয়ে বানানো কিনা