গত তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চলমান এ বন্যায় মহানগর ও জেলাজুড়ে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সোয়া ৮ লাখে। একদিনে বেড়েছে প্রায় এক লাখ।
বুধবার (১৯ জুন) বিকালে জেলা প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে এসব জানানো হয়েছে।
গত ২৭ মে সিলেটে বন্যায় জেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই গত শনিবার (১৫ জুন) ফের বন্যাকবলিত হয় সিলেট। ঈদের দিন (১৭ জুন) ভোর থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ, সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও সৃষ্টি হয় বন্যা পরিস্থিতি।
সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে পানি কিছুটা কমে, কিন্তু মঙ্গলবার ভোর থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি, উজানেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে হু হু করে বাড়তে থাকে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। বুধবার (১৯ জুন) বিকাল পর্যন্ত ৩টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
বুধবার বিকালে সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, এ সময় পর্যন্ত মহানগরের ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ পানিবন্দি।
প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন আশ্রয় নিয়েছে। তবে, বেশিরভাগ মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনিচ্ছুক। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজনদের উঁচু বাসা-বাড়িতে।
বুধবার বিকাল ৩টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র জানায়, এ সময় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বইছে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। অন্যদিকে সারি-গোয়াইন নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.৫ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটজুড়ে ২০২২ সালের মতো ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। মহানগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গলা পর্যন্ত পানি উঠে গিয়েছে। নিচু এলাকাগুলোর বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে এসব এলাকার মানুষ।
অন্যদিকে, সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
পানিবন্দিদের উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন সূত্র।
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি উপজেলার পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নেও কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৩ দিন সিলেট অঞ্চলে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।