২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার কম ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (১৫ মে) সকালে মালিবাগ মোড় সংলগ্ন উড়ালসেতুর নিচে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের গণশৌচাগার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানান।
ঢাদসিক মেয়র বলেন, ‘২০১৯ সালে ঢাকা শহরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত বছর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল যে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ২০১৯ সালকেও ছাড়িয়ে যাবে। এরপর আমরাও এ বিষয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মশককর্মী, যান-যন্ত্রপাতি, মানসম্মত কীটনাশক মজুদ ও কাউন্সিলরদের সহযোগিতায় আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছি।’
আরও পড়ুন: জুলাইয়ের আগে পান্থকুঞ্জকে নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে: মেয়র তাপস
তিনি বলেন, ‘রোগীদের ঠিকানার ৪০০ গজের মধ্যে বিশেষ মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন জায়গা ও স্থাপনায় আমাদের মশককর্মীরা কাজ করেছে। ফলে সফলতার সঙ্গে এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি বলেই ২০২৩ সালে উত্তর ও দক্ষিণ (সিটি করপোরেশন) মিলিয়ে ঢাকা শহরে ডেঙ্গুরোগী ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার। অর্থাৎ, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার কম ছিল।’
সকলের সহযোগিতায় এ বছরও ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগামী ২১ মে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করব। ইতোমধ্যে তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ সকল সরকারি, আধা-সরকারি স্থাপনা ও আবাসনে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করব।
‘প্রাথমিক পর্যায়ে একবার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করব এবং যে সকল স্থাপনায় লার্ভা পাওয়া যাবে আমরা সেগুলো নিধন করব। পরবর্তীতে সেসব স্থাপনা ও আবাসনে যাতে এডিসের প্রজননস্থল সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
আরও পড়ুন: বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ঢাকার সবুজায়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছাবে: মেয়র তাপস
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ডেঙ্গু সংক্রমণ-বিষয়ক নির্ভুল তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘এক মাস আগে আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেই বৈঠকে আমরা বলেছি যে, আমাদেরকে ডেঙ্গু রোগীর যে তথ্য দেওয়া হয় তা পরিপূর্ণ নয়, অসম্পূর্ণ। ফলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার রোগীদের তথ্য পেতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়।
‘ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আসে তাদের পৃথক করা কঠিন কোনো কাজ নয়। কারণ তাদের বেশিরভাগই রেফারেল হয়ে আসে। ওইসব রোগীকে পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করলে ঢাকার প্রকৃত রোগী শনাক্ত করা সহজ হয়। দেখা যাচ্ছে ঢাকার প্রকৃত রোগী ১০ জন, সেখানে যদি আমাদের (ঢাকার বাইরের রোগীসহ) ১০০টি ঠিকানা দেওয়া হয়, তাহলে বাকি ৯০টি ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে আমাদের সময়ক্ষেপণ হয়। এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হলে আমাদের পক্ষে সঠিকভাবে (এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসের) কাজটা করা কষ্টসাধ্য হয়। সঠিক তথ্য দিলে আমরা সঠিকভাবে কাজটা করতে পারি। ঢাকাবাসীকে আমরা আরও বেশি ফলপ্রসূ সেবা দিতে পারব।’
আরও পড়ুন: প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অভাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হার বেশি: মেয়র তাপস
এর আগে ঢাদসিক ১২ নম্বর ওয়ার্ডে পাইপ-নর্দমা পরিষ্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র।
পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে দক্ষিণ কমলাপুর কালভার্ট সংলগ্ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গণশৌচাগার উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে তারা গণশৌচাগারের পাশে ২টি কদম ফুলের চারা রোপণ করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সোয়ে মেন জো, কাউন্সিলরদের মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খ ম মামুন রশিদ শুভ্র, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সুলতান মিয়া, সংরক্ষিত আসনের ফারহানা ইসলাম ডলি, মিনু রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।