২০২৫ সালের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনপূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি, বাস্তবতার নিরীখে আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হবে। অনেকগুলো বিষয় আছে। এটা আমার প্রাথমিক অনুমান।’
বৃহস্পতিবার রাতে চ্যানেল আইয়ের 'আজকের পত্রিকা' অনুষ্ঠানে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী নির্বাচনের সময় জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
ড. আসিফ বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে শিগগিরই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে।
এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রত্যর্পণ ও ন্যায্যতার বিধান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তি রয়েছে এবং ভারত চুক্তি মেনে চললে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো উচিত।
তিনি বলেন, ‘ন্যায্যতার’ ভিত্তিতে কাজ করা হয়নি-ভারত যদি এমন কোনো ধারা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে, তাহলে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হবে।
আসিফ বলেন, তাদের অনেক আইনি ব্যবস্থা থাকবে। ‘ভারত যদি সততার সঙ্গে এর বিশ্লেষণ করে, তাহলে অবশ্যই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বাধ্য।’
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় কোনো দণ্ডিত ব্যক্তির বিচার শুরু হলে বাংলাদেশ অবশ্যই তার প্রত্যর্পণ চাইবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করব, আদালত এক মাস সময় দিয়েছেন।’ উপদেষ্টা এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাননি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন প্রতিবেদনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারত সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তিনি সংক্ষিপ্ত নোটিশে ভারতে এসেছেন। আপাতত সেখানেই তিনি থাকবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, 'আমরা কিছু রিপোর্ট দেখেছি। আমার মন্তব্য করার কিছু নেই। আমি আগেই বলেছিলাম নিরাপত্তার কারণে খুব অল্প সময়ের নোটিশে তিনি এখানে (ভারত) এসেছেন।’
মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে টিভি অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, তিনি কখনো বলেননি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো সাংবাদিকের বিচার হবে।
তিনি বলেন, সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তিনি আসলে যা বলেছেন, তার বড় ধরনের ভুল ব্যাখ্যা এটি।
তিনি সবচেয়ে ক্ষমতাধর উপদেষ্টা-এমন ধারণার বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল প্রচার এবং উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্য উপদেষ্টাদের মতো তারও একই ও সমান ক্ষমতা।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র নেতাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করেন এবং এটি যৌক্তিকভাবে সম্পন্ন হয়।
তার উপর প্রচণ্ড কাজের চাপ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন উপদেষ্টা। তিনি বর্তমান অবস্থানের তুলনায় অতীতে অনেক স্বাধীনতা উপভোগ করেছেন বলেও জানান।
আসিফ তার বর্তমান অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘অতীত জীবন ছিল সহজ-সরল। আমি অন্যের ভুল ধরিয়ে দিচ্ছি দেখে মানুষ খুশি হতো। এখন ২৪ ঘণ্টা কাজ করি, তবুও মানুষকে খুশি করতে পারি না। এর জন্য আমার খারাপ লাগছে।’
তিনি বলেন, পিএইচডি করতে গিয়ে তিনি একই রকম কঠোর পরিশ্রমী সময় পার করেছেন এবং তিনি যদি তার কাজ দিয়ে মানুষকে খুশি করতে পারেন তবে তিনি খুশি হবেন।