দেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেওয়ার পরও কয়েকটি বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি বিভিন্ন উপায়ে দেশে ক্ষতিকর এই পণ্যের প্রচারে নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ২২টি সংগঠন যৌথভাবে ‘ই-সিগারেট/ভেপিং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি: নিষিদ্ধ জরুরি’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের’ সংশোধনী প্রস্তাবে ই-সিগারেটের প্রচার, প্রসার, আমদানি, রপ্তানি, পরিবেশন, বিপণন নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ই-সিগারেট উৎপাদন ও প্রসারে সিগারেট কোম্পানির উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম সংকটের কারণ হতে পারে বলেও মত দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশে ভোক্তাদের আধুনিক জীবনধারার কথা উল্লেখ করে নতুন কিছু আর্ন্তজাতিক মানের পণ্যের আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিদেশি সিগারেট কোম্পানি বিএটি। চিঠিতে তারা এধরনের পণ্যের চাহিদা নিরুপণে দেশের বাজারে এসব পণ্য বিক্রয় এবং পরে স্থায়ীভাবে এ পণ্যের উৎপাদন, পরিবেশন, বিপণন ও রপ্তানি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। তাদের এ ধরনের প্রচেষ্টা দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। গণমানুষের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ই-সিগারেটের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি ক্যান্সার বিষেশজ্ঞ ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, কম ক্ষতিকর টার্ম ব্যবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ-যুবক এবং ধূমপায়ীদের ই-সিগারেটে আকৃষ্ট করছে। ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর নয়, বরং খুবই ক্ষতিকর একটি পণ্য। ই-সিগারেটের ব্যবহার ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য কোম্পানিগুলো ভ্যাপিং উৎসবের আয়োজন করছে। এটি যুব সমাজকে নতুনভাবে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী এর স্বপক্ষে বিভিন্ন মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ আলোচক ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এপিডেমোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়ায় ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করেছে। দেশের প্রায় ১৫০ জনের বেশি সংসদ সদস্য ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করেছে। এখনই ই-সিগারেটের লাগাম টেনে না ধরলে পরে আইন করেও একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
ঢাকা আহসানিয়া মিশনের পরিচালক (হেলথ অ্যান্ড ওয়াশ) ইকবাল মাসুদ বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশি সিগারেট কোম্পানি বিএটি ই-সিগারেট প্রসারের লক্ষ্যে গোপনে কাজ করছে এবং ঢাকায় তাদের সহযোগিতায় পরিচালিত প্রায় ৩০ টিরও বেশি ই-সিগারেট দোকানে পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ই-সিগারেট বন্ধে ৯টি সুপারিশ করা হয়
আরও পড়ুন: তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে: ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা
বাংলাদেশে ই-সিগারেটের আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন, পরিবেশন, বিজ্ঞাপন বা প্রচার বন্ধে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজে ই-সিগারেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
অনলাইন বিজনেস সাইটসহ ই-সিগারেটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতিতে ই-সিগারেট জাতীয় পণ্য আমদানি ও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা।
অর্থ বিভাগ ও রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ই-সিগারেট, এর ডিভাইস, ই-লিকুইড, রিফিলসহ এ জাতীয় সব পণ্যের এইচআর কোড পণ্যের তালিকা প্রত্যাহার করা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ই-সিগারেট, ভ্যাপ বা অন্য কোনো নতুন নেশা জাতীয় বা তামাক জাতীয় অথবা নিকোটিন আছে এমন কোনো পণ্যের অনুমোদন না দেওয়া।
আরও পড়ুন: তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে: ই-ক্যাব
ই-সিগারেট প্রসারে কার্যরত সিগারেট কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের গোপন তৎপরতা অনুসন্ধান করে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
ই-সিগারেট বা ভেপিং জাতীয় পণ্যের ট্রেডমার্ক বা যে কোনো ধরনের নিবন্ধন বাতিল করা।
অতিদ্রুত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়া পাস করে বাংলাদেশকে ই-সিগারেট মুক্ত করা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ডা. অরুপ রতন চৌধুরী। টিসিআরসির প্রোগ্রাম অফিসার ফারহানা জামান লিজার উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, ডাসের উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি বীরেন শিকদারের