স্মৃতি পরিষদের চেয়ারম্যান ও করিমপুত্র শাহ নুর জালাল জানান, বাউল শাহ আবদুল করিম স্মৃতি পরিষদ জন্মস্থান উজান ধল গ্রামের বাড়িতে তার কর্ম ও সৃষ্টি নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আবদুল করিমের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও করিমগীতির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকবেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ অতিথিরা। এছাড়া স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।
শুধু আধ্যাত্মিকতায় নয় জাগতিক বিষয়ে শাহ আবদুল করিমের সৃষ্টির দখলদারিত্ব কোনো অংশেই কম নয়। রাষ্ট্র, সমাজ এবং হাওরাঞ্চলের অবহেলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ আর অধিকারের কথা তার গানে ফুটে উঠেছে। গানের মাধ্যমে সহজ সরল ভাষা আর হৃদয় কাড়া সুরের মাধ্যমে তুলে নিয়ে এসে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম স্থান করে নিয়েছেন অসংখ্য সংগীত প্রেমির অন্তরে।
মানুষ হয়ে মানুষকে কষ্ট না দেওয়াটাই মানুষের বড় ধর্ম এ সত্যই শাহ আবদুল করিম লেখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ছিলেন শোষকের বিরুদ্ধে হুংকার, দিয়েছেন বিপ্লবের ডাক। প্রেম দিয়ে শত্রুকে জয় করা এবং সম্প্রীতির শিক্ষা দিয়েছেন শাহ আবদুল করিম।
শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উজানধল গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইব্রাহীম আলী ও মাতার নাম নাইওরজান।
দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। যাকে তিনি আদর করে ‘সরলা’ নামে ডাকতেন।
ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে।
আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল।
তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে সাউন্ড মেশিন নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তার সম্মানে জীবন্ত কিংবদন্তী বাউল শাহ আবদুল করিম নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তার জনপ্রিয় ১২ টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী ২০০৯ সালের প্রথম দিকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
বাউল শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৭টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে তার রচনাসমগ্র (অমনিবাস)-এর। বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন।