বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী এবং কিংবদন্তি ব্যান্ড মাইলসের সাবেক প্রধান গায়ক শাফিন আহমেদের মরদেহ দেশে পৌঁছেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে হৃদযন্ত্র ও কিডনি বিকল হয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই রক বেজ গিটারিস্ট, গায়ক-গীতিকার ও রেকর্ড প্রযোজক।
এই তারকা সংগীতশিল্পীর মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে দেশের সংগীত জগত।
সোমবার (২৯ জুলাই) বিকালে শাফিনের লাশ দেশে পৌঁছায় বলে জানান শাফিনের বড় ভাই ও মাইলস ব্যান্ডের প্রধান হামিন আহমেদ।
এর আগে স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর ১টায় ভার্জিনিয়ার দার আল নূর ইসলামিক কমিউনিটি মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
হামিন আহমেদ জানান, আজ (৩০ জুলাই) বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে শাফিনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে কিংবদন্তি এই রক তারকাকে।
হামিন আরও জানান, আগামী শুক্রবার (২ আগস্ট) বাদ জুমা বনানী কবরস্থানের পাশে গুলশান কমিউনিটি মসজিদে শাফিন আহমেদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
পরিবার ও স্বজনদের পক্ষ থেকে সবাইকে শাফিন আহমেদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তার জানাজা ও কুলখানিতে উপস্থিত হতে অনুরোধ জানিয়েছেন হামিন আহমেদ।
১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় উপমহাদেশের অগ্রণী সংগীতশিল্পী কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশবে ঢাকায় চলে আসার পর শাফিন আহমেদ নয় বছর বয়সে নজরুল সংগীত শেখার মাধ্যমে তার সংগীত জীবন শুরু করেন। ঢাকার সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা শেষে বড় ভাই হামিন আহমেদের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পড়তে যান। সেসময় পশ্চিমা সঙ্গীতের সংস্পর্শে আসেন তিনি।
১৯৭৯ সাল থেকে মাইলসের কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও বেজ গিটারিস্ট ছিলেন শাফিন আহমেদ। ২০০৯ সালে মাইলস ছাড়ার পর ২০১০ সালে রিদম অব লাইফ নামে নিজের ব্যান্ড গড়েন শাফিন, যা ২০১৪ সাল পর্যন্ত চলে।
মাইলস (১৯৮২) দিয়ে শুরু করে মাইলসের প্রতিটি অ্যালবামের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন শাফিন আহমেদ। মাইলস (১৯৮২) অ্যালবামের পর অ্যা স্টেপ ফারদার (১৯৮৬), প্রতিশ্রুতি (ব্যান্ডের প্রথম বাংলা অ্যালবাম, ১৯৯১), প্রত্যাশা (১৯৯৩), প্রত্যয় (১৯৯৬), প্রয়াস (১৯৯৭), প্রবাহ (২০০০), প্রতিধ্বনি (২০০৬), প্রতিচ্ছবি (২০১৫) ও প্রবর্তন (২০১৬) অ্যালবামে গান করেন তিনি।
মাইলসের প্রথম বাংলা অ্যালবাম 'প্রতিশ্রুতি'র জনপ্রিয় গান 'চাঁদ তারা' ১৯৯২ সালে বিটিভির ঈদ স্পেশালে প্রচারিত হয়। দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় গানটি। তারপরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মাইলসকে।
মানাম আহমেদের সুরে শাফিন আহমেদ 'ফিরিয়ে দাও', 'ধিকি ধিকি', 'নীলা', 'চাঁদ তারা সূর্য', 'কি জাদু', 'জানি তুমি'সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ও সুপারহিট গানের জন্য শ্রোতাদের ভালোবাসা পেয়েছেন।
শাফিন আহমেদ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন 'আজ জন্মদিন তোমার' গানটি দিয়ে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর এই গানটি এখনও জন্মদিন উদযাপনের গান হিসেবে বাজানো হয়। বিশিষ্ট সংগীত প্রযোজক প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুরে গানটি প্রথম প্রিন্সের মিক্সড অ্যালবাম দাগ থেকে যায় (২০০৪)-এ প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও শাফিন আহমেদ তোমাকে (১৯৮৭), পাগলা ঘণ্টি (১৯৯৮), ছবি আর স্মৃতিগুলো (১৯৯৯), বেস্ট অব শাফিন আহমেদ (২০০১), কতদিন দেখি না তোমায় (২০০৬), ভাইরাস (২০০৬), হারানো সুখ (২০০৭), মাই লাভ সংস (২০১০) ও মনে পড়ে আজসহ (তার মা ফিরোজা বেগমের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিস্বরূপ নজরুল গানের অ্যালবাম, ২০১৬) বেশ কয়েকটি একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন।