তার নানা আব্দুল মজিদ দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকম সংসার চালান। এই কষ্টের মাঝেও লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি জাহিদ। জেএসসি ও এসএসসিতে তার নানা দিতে না পাড়ায় স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় ফরম পূরণ করা হয়েছিল তার। অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে জাহিদ এবছরের এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
আরেক মেধাবী ছাত্র শাহিনুর ইসলাম সোহান। বাবা ইলেকট্রিকের কাজ করে ৬ সদস্যের পরিবারের খরচ জোগায়। পরিবারের খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। এর মধ্যে তিন ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ বহন করা তার বাবার পক্ষে কষ্টসাধ্য। খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টের মাঝে লেখাপড়া করে সেও এবার এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
জাহিদ ইসলাম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম বেজগ্রাম এলাকার আব্দুল মজিদের নাতি ও আলহাজ্ব শমসের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। শাহিনুর ইসলাম সোহান একই উপজেলার পূর্ব বেজগ্রাম এলাকার আবু কালামের ছেলে ও একই বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে এখনই হুমিকর মুখে তাদের বাকি শিক্ষা জীবন। তাহলে তাদের স্বপ্নযাত্রা কি এখানেই থেমে যাবে?
জাহিদের নানা আব্দুল মজিদ বলেন, জাহিদ ছোট থেকেই আমার সংসারে বড় হয়েছে। তার বাবা-মা তার কোন খরচ বহন করে না। আমি বুড়ো মানুষ দিনমজুরের কাজ করে কোন রকম সংসার চালাই। অনেক সময় আমার নিজের খরচই জোগাতে পারি না। এর মাঝে জাহিদের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালাব। এই কষ্টের মাঝেও জাহিদ তার লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। জাহিদ অনেক ভালো ছাত্র। সহযোগিতা পেলে সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
জাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অনেক ছোট থাকতেই বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকেই নানা-নানির কাছে বড় হয়েছি। অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়েছি। এখন আমার নানার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এখন আমার স্বপ্ন মনে হয় স্বপ্নই থেকে যাবে।’
শাহিনুর ইসলাম সোহানের বাবা আবু কালাম বলেন, ‘আমি ইলেকট্রিকের কাজ করে যা আয় করি তাতে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। আমার ছেলে সত্যিই অনেক মেধাবী। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমি তার লেখাপড়ার খরচ বহন করতে পারছি না। ’
শাহিনুর ইসলাম সোহান বলেন, ‘অভাব অনটনের মাঝে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য এ পর্যন্ত এগিয়ে এসেছি। কিন্তু আমার বাবার পক্ষে খরচ যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু আমার স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। আমি এইচএসসিতে ভর্তি হতে পারব কিনা জানিনা।’
আলহাজ্ব শমসের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বাবলু বলেন, ‘জাহিদ ইসলাম ও শাহিনুর ইসলাম সোহান দুজনই অত্যন্ত মেধাবী ও দরিদ্র ঘরের সন্তান। এসএসসিতে ফরম পূরণে জাহিদ ইসলামকে আমি সহযোগিতা করেছিলাম। আমার বিশ্বাস সহযোগিতা পেলে তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।’