পাউবো দীর্ঘ দিনেও এই এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করতে না পারায় বিল খুকশিয়াসহ ২৭ বিলে জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে ৬৯টি গ্রামের ভুক্তভোগী জনগণ এই উদ্যোগ নিয়েছে। এসব এলাকার মানুষ তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১২৯টি সেচ পাম্পের মাধ্যমে ১৫ জানুয়ারি থেকে এই সেচ কার্যক্রম শুরু করে। এভাবে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম সফল হলে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ২৪ হাজার বিঘা জমিতে ধান আবাদের সুফল পাবেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেশবপুর উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের ডহুরী গ্রামের হরি নদীর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের গা ঘেঁষে সারিবদ্ধভাবে ১২৯টি বিভিন্ন আকারের সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। যে পানি হরি নদীতে গিয়ে নামছে।
অরও পড়ুন: যাদুকাটা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে সুনামগঞ্জের ২ গ্রাম
জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তবায়ন কমিটির নেতারা বলছেন, বিল খুকশিয়াসহ ২৭ বিলের অবস্থান পার্শ্ববর্তী খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শেষ থেকে যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলায় হরি নদীর গা ঘেঁষে। কেশবপুরের পাজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন, মনিরামপুরের দুর্বাডাঙ্গা ও মনোহরপুর ইউনিয়নসহ চারটি ইউনিয়নের মধ্যে ২৭টি বিলের অবস্থান। আর এই সকল এলাকার ৬৯টি গ্রামের মানুষ পাউবোর উদাসীনতায় দীর্ঘ দিন যাবত জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তবায়ন কমিটির কোষাধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর রহমান বলেন, এক সময় হরি নদী দিয়ে এই বিলগুলোর পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে নদীটি ভরাট হতে থাকায় বর্তমানে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। আর তখন থেকে এই বিলগুলোতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। তখন এই বিলের মৎস্য ঘের গড়ে উঠে।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এ বছর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা শুরু করেছি। প্রতিটি মেশিন মালিককে দিন প্রতি দেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। ডিজেল খরচ বাস্তবায়ন কমিটির।’
এই কাজে তদারকিসহ নানা রকম কাজের জন্য মোট ২৪ জনকে নিযুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের জন্য ঘের ও জমি মালিকদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। সকল খরচ এই টাকা দিয়ে মেটানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ হাজার বিঘা জমি আবাদের যোগ্য হয়েছে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন: রানীনগরে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে কয়েক গ্রামের মানুষ
ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার গুরুদায়িত্ব নিয়েছি: মেয়র তাপস
কমিটির আহ্বায়ক ও কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন বলেন, ‘এই উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে মানুষের দীর্ঘশ্বাস দেখে। এই বিল খুকশিয়ার সাথে ২৭টি বিল জড়িত। কেশবপুর ও মনিরামপুরের এসব বিলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ফসল হচ্ছে না। গরু, ছাগল, মানুষ না খেয়ে মরছে। তাদের কথা চিন্তা করে এই কাজ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এক সময় এখানে টিআরএম চালু হয়েছিল, তখন অনেক জমিতে ফসল হত। হরি নদীটি বেশ গভীর হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আমাদের দাবি দ্রুত টিআরএম চালু করা হোক।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই বিলগুলোতে টিআরএম চালু করার জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিলগুলোতে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।’