সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ ক্যাম্পাসের ইটপাথরে গড়া ভবনের সামনে দ্যুতি ছড়াচ্ছে রঙ-বেরঙের বাহারি ফুল। নজরকাড়া সব ফুলের মন মাতানো সৌরভ আর স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ সবাই। ফুলের সৌন্দয্যে যেন স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে খুবি। গাঁদা, আকাশি সাদা স্নোবল, সালভিয়া, দোপাটি, ক্যালেন্ডোলা, দায়েনথাঁচ, ফ্লোগর্স, ইন্টালিয়াম, স্নাকড্রাগন, পেনজি, কারিয়াফছি, ভারবিনা, পিটুনিয়া, স্টার গোল্ড, মৌচন্ডা, পানচাটিয়া, অ্যালমন্ডা, গ্লাডিয়া, তালপাম্প, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকা, ছোট চায়না গাঁদা, মোরগঝুঁটি, কসমস, জুঁই, চামেলি ছাড়াও আছে টগর, বেলি এবং সাইকাস, ক্রিসমাস, জবা, রঙ্গনসহ নানান জাতের ফুল।
নানা জাতের ফুল বেশি ফুটেছে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে ও বাইরে এবং এরপর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে। আবাসিক হলগুলোতেও ফুটেছে নানা বর্ণের ফুল। শীতকালীন নানা প্রজাতির এসব ফুলের সমারোহে এখন সুশোভিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
ফুলে ফুলে সজ্জিত ক্যাম্পাস যেনো শিল্পীর রঙ তুলিতে আঁকা নয়ন জুড়ানো কোনো ছবি। আর প্রতিদিনিই ফুলে ফুলে সুশোভিত ক্যাম্পাস দেখতে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বেশিরভাগই আসছেন বন্ধুদের সাথে নিয়ে।
খুবি ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, খুবি ক্যাম্পাস ফুলে ফুলে সেজেছে। যা দেখতে প্রতিবছরের মতো এবারও বন্ধুদের নিয়ে এসেছি। ফুলে মোড়ানো ক্যাম্পাস দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আশিক বিশ্বাস বলেন, খুবি ক্যম্পাস ফুলে ভরে গেছে। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস প্রতিবছর কাছাকাছি সময়ে হলেও এবার একই দিনে। তাই একসাথে দুই দিবস পালন করবে তরুণ প্রজন্মসহ নানা বয়সী মানুষ। যে কারণে ওই দিন ক্যাম্পাসে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন।
একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে যেমন সজিবতা বা পরিবর্তন আসে, ঠিক তেমনভাবেই নানা রকমের ফুলে আমাদের ক্যাম্পাস ভরে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ক্ষতির মুখে মেহেরপুরের ফুল ব্যবসায়ীরা
ফুল বাগানের মালি মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ফুল চাষের আগে যেসব প্রস্তুতি নেয়া দরকার তার সবই করা হয়েছিলো। যে কারণে ফুলে ফুলে ভরে গেছে ক্যাম্পাস। এবার বেশি ফুটেছে ইনকা গাঁদা, জাম্বু গাঁদা, ডালিয়া, সিলভিয়া ফুল, স্টার ও পিটুনিয়া ফুল। এক স্থানে এত বেশি ফুল ফোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনে মৌমাছিও বাসা বেঁধেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট (সম্পত্তি) শাখার উপ-রেজিস্ট্রার কৃষ্ণপদ দাশ জানান, আমরা অনেক আগেই এই ফুলের বাগান গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এখানে অনেক দর্শনার্থী প্রতিদিন ভিড় করেন। বিশেষ দিনগুলোতে এখানকার ফুলের সৌন্দর্য দেখতে জনস্রোত তৈরি হয়।
খুবির জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এসএম আতিয়ার রহমান বলেন, ক্যাম্পাসের নানা রঙের ফুলের আবির আর মৌ মৌ গন্ধ কেড়ে নিচ্ছে বিষাদ। ভালোবাসার প্লাবনে ভাসিয়ে দিচ্ছে মন। সব আবেদন, অনুরাগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বহি:প্রকাশের বড় মাধ্যম ফুল। যে কারণে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান ক্যাম্পাসে ফুলচাষে বিশেষভাবে আগ্রহী। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও ক্যাম্পাসে পরিকল্পিতভাবে ফুলচাষ হয়েছে। খুলনা শহরের কোথাও এত ফুল নেই।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলের চাষে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় তো সৌন্দর্যের জায়গা, সৌন্দর্য চর্চার একটি অংশ। সত্য, সুন্দর এবং কল্যাণ এই বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় লালন করে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলে শিক্ষার্থীদের মন ভালো হয়ে যাবে, সেটি নিশ্চিত করাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাজ। আমরা তারই অংশ হিসেবে প্রতিবছর ফুলচাষে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি ফুলের চাষ করা হয়েছে বলেও জানান খুবি উপাচার্য।