চলতি সপ্তাহে নেতানিয়াহু সরকারের একটি বড় সামরিক অভিযান ও অস্থিরতার মধ্যে গাজায় আটক চার ইসরায়েলি জিম্মিকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধারের পরে প্রস্তাবিত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এরপরই আবারও মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
১০ দিন আগে পাওয়া প্রস্তাবে হামাসের পক্ষ থেকে এখনো কোনো দৃঢ় সাড়া না পাওয়া যায়নি। গত অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতের পর সোমবার ব্লিনকেন ওই অঞ্চলে তার অষ্টম কূটনৈতিক মিশন শুরু করবেন।
তিনি ইসরায়েল, জর্ডান ও কাতার সফরের আগে কায়রোতে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্লিঙ্কেন এবং অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তারা জিম্মি উদ্ধারের প্রশংসা করেছেন। যদিও এই অভিযানের ফলে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। একই সঙ্গে এটি একটি ইসরায়েলের সাহসী পদক্ষেপও। তবে আইডিএফের এই হামলার ফলে ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার হামাসের সংকল্পকে আরও দৃঢ় করে চলমান যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে।
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান রবিবার বলেছেন, 'হামাস এই বিশেষ অভিযানটি কীভাবে বিবেচনা করবে এবং তারা হ্যাঁ বলবে কি বলবে না এবং সে বিষয়ে তারা কী করবে তা বলাও কঠিন।’ ‘আমরা এই মুহূর্তে হামাসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক উত্তর পাইনি।’
যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের সঙ্গে প্রধান মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি ও কাতারি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ব্লিনকেন তিন ধাপের প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসকে রাজি করানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেবেন। জিম্মিদের মুক্তি এবং শত্রুতায় সাময়িক বিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহারের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের সুরক্ষায় প্রতিটি দেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
এবিসির 'দিস উইক' অনুষ্ঠানে সুলিভান বলেন, 'আমরা আশাবাদী, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাই এক সুরে কথা বললে হামাস সঠিক বার্তাটি পাবে।’
তবে হামাসই একমাত্র বাধা নাও হতে পারে।
এই চুক্তিটিকে ইসরায়েলি উদ্যোগ হিসাবে বর্ণনা করা হলেও হাজার হাজার ইসরায়েলি এই চুক্তির সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, চুক্তির বিষয়ে যা প্রকাশ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। বরং হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সমস্ত লড়াই বন্ধ করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।’
এদিকে নেতানিয়াহুর উগ্র ডানপন্থী মিত্ররা হুমকি দিয়েছে যে, তিনি যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন তবে তার সরকার ভেঙে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধোত্তর গাজার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন না করায় জনপ্রিয় মধ্যপন্থী বেনি গান্টজ রবিবার তিন সদস্যের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও জিম্মি উদ্ধারের পর তাকে পদত্যাগ না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন নেতানিয়াহু।
এর আগে ইসরায়েলে প্রায় সব সফরেই নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট, গান্টজ ও ইসরায়েলের বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্লিনকেন। গান্টজের পদত্যাগ ব্লিঙ্কেনের সময়সূচিতে অগত্যা প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি করছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: বাইডেনের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সমর্থন করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার শুক্রবার বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ের জন্য কীভাবে লাভবান হবে তা নিয়েই এই সফরে আলোচনা করবেন ব্লিনকেন।’
মিলার বলেন, এই চুক্তি কেবল গাজার মানবিক সংকটই দূর করবে না, বরং ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাসের পটভূমি তৈরি করবে এবং আরব প্রতিবেশীদের সঙ্গে ইসরায়েলের বৃহত্তর সংহতির পরিবেশ তৈরি করবে। যা ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা জোরদার করবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্লিনকেন প্রায় প্রতি মাসে একবার করে ওই অঞ্চল সফর করলেও ৩৬ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে, যুদ্ধের কারণে ব্যাপক খাদ্য সংকটে থাকা ফিলিস্তিনিদের কাছে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য রসদ সরবরাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, মধ্য জুলাইয়ের মধ্যে গাজার ১০ লাখেরও বেশি মানুষ সর্বোচ্চ মাত্রার অনাহারের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ উন্নত করার বিষয়ে জর্ডানে একটি জরুরি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন ব্লিনকেন।