জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার পাশাপাশি ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি এবং ঘৃণামূলক বক্তব্যের বিস্তার হ্রাস করার লক্ষ্যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তথ্য বিশুদ্ধতার জন্য সরকার, প্রযুক্তি কোম্পানি এবং অন্যান্যদের সঙ্গে একটি স্বেচ্ছাসেবী আচরণবিধির বিষয়ে পরামর্শ করছে।
১৮ জুন ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর কাউন্টারিং হেট স্পিচ’ উপলক্ষে একটি বার্তায়, জাতিসংঘের প্রধান বলেছিলেন প্রায়শই রাজনৈতিক লাভের জন্য যে ঘৃণাত্মক বক্তব্য ভয় এবং বিভাজন সৃষ্টি করতে ব্যবহৃত হয়। এরজন্য সম্প্রদায় এবং সমাজকে প্রচুর মূল্য দিতে হয়।
তিনি বলেছেন, ‘এটি সহিংসতাকে উসকে দেয়, উত্তেজনা বাড়ায় এবং মধ্যস্থতা ও সংলাপকে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি গণহত্যা এবং অন্যান্য নৃশংস অপরাধের একটি সতর্কীকরণ লক্ষণ।’
গুতরেস বলেন, ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রায়শই দুর্বল জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়, যার কারণে বৈষম্য, কলঙ্ক ও প্রান্তিকীকরণ ব্যাপকতা লাভ করে। এর শিকার বেশি হয় সংখ্যালঘু, নারী, শরণার্থী, অভিবাসী এবং লিঙ্গ ত্ত যৌন বৈচিত্র্যেময় জনগোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ঘৃণামূলক বক্তব্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করলেন আন্তোনিও গুতেরেস
তিনি আরও বলেন, পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ও ইন্টারনেট বন্ধ করার ঘটনা ঘৃণামূলক বক্তব্যের প্রতি বিভ্রান্তিকর ও অস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। এমনকি এগুলো ঘৃণামূলক বক্তব্য মোকাবিলায় সবচেয়ে সোচ্চার থাকা অনেককে চুপ করিয়েও দিতে পারে, যেমন- মানবাধিকার রক্ষাকারী ও সাংবাদিকরা।
তিনি বলেন, ঘৃণামূলক বক্তব্যের মুখে আমরা অক্ষম নই। আমরা এর বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পারি এবং এটিকে প্রতিরোধ ও এর সবগুলো ধরনের অবসান ঘটাতে কাজ করতে পারি। আর এ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে।
‘দ্য ইউনাই্টেড ন্যাশন্স স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড প্ল্যান অব অ্যাকশন অন হেট স্পিচ’ হলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড অনুসারে ঘৃণামূলক বক্তব্যের কারণ ও এর প্রভাব মোকাবিলায় একটি সমন্বিত কাঠামো।
আরও পড়ুন: বুকের দুধের বিকল্পগুলোর বাজারজাতকরণের মান নির্ধারণে মঙ্গলবার জেনেভায় বসবে গ্লোবাল কংগ্রেস
বিশ্বজুড়ে আমাদের অফিস ও কর্মীবাহিনী এই কৌশলের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঘৃণামূলক বক্তব্য মোকাবিলা করছে।
শিক্ষামূলক উদ্যোগ, ইতিবাচক বক্তব্য প্রচার, মূল কারণগুলো বোঝা ও সমাধানের জন্য গবেষণা এবং অন্তর্ভুক্তি ও সমান অধিকারের কথা প্রচারের প্রচেষ্টা– এই সবগুলোরই ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধর্মীয়, কমিউনিটি ও ব্যবসায়ী নেতা– সবাই এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারেন।
তিনি দিবসটি উদযাপনের সময় আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যেহেতু ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রতিরোধ দিবস উদযাপন করছি, তাই আসুন অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়পরায়ণ ও শান্তিপূর্ণ কমিউনিটি ও সমাজের কথা তুলে ধরি। সবার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করার পাশপাশি এই বিষাক্ত ও ধ্বংসাত্মক বিষয়গুলো প্রতিরোধ ও অবসানে আমরা নতুন করে আমাদের প্রচেষ্টা শুরু করি।’
আরও পড়ুন: নারীদের জমির মালিকানায় আইনি বাধা দূর করুন: জাতিসংঘ প্রধান