প্রায় তিন দশক পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক শহরে পা রেখেছেন দুই ইহুদি ধর্মাবলম্বী। এসময় বাবা রাব্বি জোশেফ হামরা ও ছেলে হেনরি দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) হিব্রু ভাষায় হাতে লেখা একটি তাওরাত পাঠ করেন। বহুবছর বছর পর নিজ দেশে পা রাখতে পেরে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। খবর আরব নিউজের।
বিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে জোসেফ হামরা ও ছেলে হেনরি সিরিয়া ছেড়ে পাড়ি জমান নিউ ইয়র্কে। সে সময়ে সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদ দেশটির ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়ার কয়েক হাজার ইহুদির মধ্যে প্রায় সকলেই সিরিয়া ছাড়তে বাধ্য হন। সে সময় জোসেফও পালিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রে।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামসের (এইচটিএস) হাতে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০ বছর ধরে চলা আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটে।
এরপরই জোসেফ হামরার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রচারগোষ্ঠী সিরিয়ান ইমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্সের সহায়তায় দামেস্কে সফরের পরিকল্পনা করেন। সিরিয়াতে এসে তারা দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
নতুন কর্তৃপক্ষ বলেছে, সিরিয়ার সব সম্প্রদায় তাদের দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে ভূমিকা রাখবে। তারা অসাম্প্রদায়িক দেশগড়ার কথা বললেও ইতোমধ্যে দেশটিতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বেশ কয়েকটির ঘটনা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় অতর্কিত হামলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৪ কর্মকর্তা নিহত, আহত ১০
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ শেষে ৪৮ বছর বয়সী হেনরি হামরা বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকার ইহুদি ঐতিহ্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের সহায়তা চাই, সরকারের নিরাপত্তা চাই।’
ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন দামেস্কের আল-কাদিমা শহরের একটি সরু গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হেনরি ও জোসেফ তাদের এক সময়ের প্রতিবেশী ফিলিস্তিনি সিরীয়বাসীদের কাছে ছুটে যান।
পরে বেশ কয়েকটি সিনাগগে হাতে আঁকা হিব্রু অক্ষর দেখে অবাক হন। হেনরি বলেন, ‘আমি চাই আমার বাচ্চারা ফিরে আসুক এবং এই সুন্দর উপাসনালয়টি দেখুক। এটি একটি শিল্পকর্ম।’
আল-কাদিমা শহরের সিনাগগ এবং ইহুদি স্কুলটি অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকলেও, দামেস্কের পূর্বাঞ্চলীয় জোবার শহরে অবস্থিত সিরিয়ার সবচেয়ে বড় সিনাগগটি প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বহুযুগ ধরে জোবার ছিল ইহুদি সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। এই শহরে বাইবেলের নবী এলিয়ের সম্মানে নির্মিত এই বৃহৎ সিনাগগটি ধ্বংসের আগে হয়েছিল লুটপাটের শিকার।